বাংলার মুমিন মুসলমানরা কি তিহাত্তর কাতারে বিভক্ত হয়ে গেছে ?

 প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৭:৫৫ অপরাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

বাংলার মুমিন মুসলমানরা কি তিহাত্তর কাতারে বিভক্ত হয়ে গেছে ?

(এহছান খান পাঠান):

পেশায় সাংবাদিক হওয়ায় আশেপাশের সব বিষয়ে খোজ রাখতে হয়। ভালো-মন্দ সব বিষয়ে নূন্যতম জ্ঞানও রাখতে হয়। 

অনেকেই প্রশ্ন করে বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয় আলেমদের একে অন্যের বিষেদগার সম্পর্কে। 

বাংলাদেশে শীত মৌসুমে প্রায় প্রত্যেক পাড়া-মহল্লায় ওয়াজ মাহফিল আয়োজন একটা ঐতিহ্যগত বিষয়। আয়োজকরা দেশের নামীদামী এবং আলোচিত বক্তাদের অনেক টাকা খরচ করে দাওয়াত করে আনেন। সোস্যাল মিডিয়ার কল্যানে ওয়াজগুলো সামনে চলে আসে।

কিছু বক্তা শুধুমাত্র আলোচনায় আসার জন্য এবং ভাইরাল হওয়ার আসায় বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে আজেবাজে এমনকি অশ্রাব্য ভাষায় ভিন্নমত পোষনকারীদের আক্রমন করতে থাকেন। কিছু বক্তা শুধু কন্ঠ দিয়ে মাঠ গরম করতে চান বেশি দাওয়াত পাওয়া এবং কন্ট্রাক্ট মানি বাড়ানোর আশায়। 

 অথচ আল্লাহ কুরআন এ বলেছেন- তার কথা অপেক্ষা উত্তম কথা আর কার যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, আমি একজন মুসলিম? (সূরা ফুসিলাত, আয়াত-৩৩)


পবিত্র কুরআন এ আল্লাহ সরাসরি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমরা বিভক্ত না হই।

"আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।" (সূরা- আল ইমরান, আয়াত সংখ্যা- ১০৩)


আল্লাহ আরও বলেছেন- রাসূল(সাঃ) কে উদ্দেশ্য করে-

"নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা`আয়ালার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি(আল্লাহ) বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে।" (সূরা-আন’আম, আয়াত সংখ্যা-১৫৯)


আল্লাহ সূরা রূম এর ৩১ ও ৩২ নং আয়াতে আরও বলেছেন-

"সবাই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় কর, নামায কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত।"


উল্লেখ্য চার মাযহাব এর ইমাম (রঃ)  ইসলামের জন্য অনেক কিছু করেছেন।  ইসলামে তাদের অবদান অসীম। আমরা তাদের ভালবাসি, শ্রদ্ধা করি। তারা ইসলামকে বিভক্ত করেন নি। কিন্তু তাদের নামে যারা সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামকে বিভক্তির পথ অবলম্বন করেছেন তারা ইসলামের ক্ষতিই করছেন।


সবাই জানে, আমলের কিছুটা পার্থক্য থাকবে। এই পার্থক্য থাকার পরও নতুন দল তৈরী না করে আমাদের একসাথে থাকা উচিত। নিজের একটা মতবাদ নিয়ে একটা আলাদা নামে দল তৈরী করা, অন্য মুসলিম ভাইদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া এগুলো ইসলাম সমর্থন করে না।


ওয়াজের নামে কিছু আলেম এর কথাবার্তা মনে করিয়ে দেয় যে, বনি ইসরাঈলরা হয়েছিল বাহাত্তর কাতার, আর উম্মতে মোহাম্মাদী হবে তিহাত্তর কাতার।  এর মধ্যে এক কাতার জান্নাতি আর বাহাত্তর কাতার জাহান্নামী। আমাদের দেশের আলেমরা কি বাংলার মুমিন মুসলমানদের  তিহাত্তর কাতারে বিভক্ত  করে ফেলেছেন?


(এহছান খান পাঠান:  বার্তা সম্পাদক, দৈনিক অর্থনীতির কাগজ)

সম্পাদকীয় এর আরও খবর: