বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় স্থাপনের যৌক্তিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন

 প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৫:১৯ অপরাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় স্থাপনের  যৌক্তিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন
(এহছান খান পাঠান) : বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের মিশন স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ওএইচসিএইচআরের কার্যালয় খোলার বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন অনুসারে, তিন বছর এই কার্যালয় পরিচালিত হবে। কার্যালয় খোলা ও পরিচালনার বিষয়ে উভয় পক্ষ একটি সমঝোতা স্মারকে সই করবে। তবে এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগেই উপদেষ্টা পরিষদে বিষয়টির অনুমোদন দেওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের (ওএইচসিএইচআর) কার্যালয় স্থাপনের আলোচনা নিয়ে বিতর্ক চলছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সরাসরি এ কার্যালয় স্থাপনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এই কার্যালয় স্থাপিত হলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বার্তা যেতে পারে কি না, সেই প্রশ্নও করছেন বিশ্লেষকরা। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে উদ্বেগ ও আশঙ্কা প্রকাশ করছি। অতীতে দেখেছি, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মানবাধিকারের নামে ইসলামী শরীয়াহ, পারিবারিক আইন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধে হস্তক্ষেপের অপচেষ্টা করেছে। এসব হস্তক্ষেপ সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত এবং ধর্মীয় অনুভূতিরও পরিপন্থি। তাই বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় হতে দেওয়া হবে না। জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের এক কর্মসূচিতে সংগঠনটির নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির দৃশ্যত উন্নতি হচ্ছে। তাই ঢাকায় ওএইচসিএইচআরের অফিস খোলার প্রয়োজন নেই। জাতিসংঘের উচিত হলো ফিলিস্তিনের গাজায়, দক্ষিণ এশিয়ার কাশ্মীর ও আরাকানে মানবাধিকার অফিস খোলা। কারণ সেখানে মুসলমানরা ভয়াবহ জাতিগত নিধনের শিকার হচ্ছে। ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস খোলা হলে একটি নেগেটিভ প্রভাব পড়বে। বিশ্বে একটি ধারণা তৈরি হবে যে, বাংলাদেশ মারাত্মক একটি বাজে অবস্থায় আছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশও খুশি হবে। তারা রীতিমতো হাততালি দেবে। তারা মনে করবে বাংলাদেশে এখন আর বেশি বিনিয়োগ হবে না। কারণ তারা নিজেরাই প্রতিযোগী। বিশ্বের কোনো একটি দেশ যদি দীর্ঘ মেয়াদে সংকটে পড়ে যায় তাহলে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশ তো এমন কোনো দীর্ঘমেয়াদে সংকটে পড়ে নাই যে তাদের অফিস লাগবে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন কার্যালয় স্থাপন হলে ইতিবাচক ফলাফল আসতে পারে। এ কার্যালয় হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরি হবে। দেশে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিও গড়ে উঠবে। সে কারণে সরকারের ওপর একটি চাপও তৈরি হবে। কার্যালয় হলে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সরাসরি তদন্ত করতে পারবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশন। (এহছান খান পাঠান, নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক অর্থনীতির কাগজ, ঢাকা।)

সম্পাদকীয় এর আরও খবর: