জনগণ চায় একটি নিরাপদ দেশ

 প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন   |   সম্পাদকীয়

জনগণ চায় একটি নিরাপদ দেশ

 বাংলাদেশে গানম্যান ও বডিগার্ড পাওয়ার বিষয়টি মূলত ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং রাষ্ট্রীয় প্রটোকল–– এই দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এটি কোনো ঢালাও অধিকার নয়। বরং সরকারের বিশেষ বিবেচনায় অনুমোদিত একটি ব্যবস্থা। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলে যে কাউকে তার বিশেষ ঝুঁকি বিবেচনা করে গানম্যান বরাদ্দ দিতে পারে। অনেক সময় রাজনৈতিক ঝুঁকি বা গুরুত্বপূর্ণ মামলার সাক্ষী হওয়ার কারণেও সরকার নিজ উদ্যোগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গানম্যান দিয়ে থাকে। সাধারণ যে কেউ এ ধরনের নিরাপত্তা পেতে লিখিতভাবে পুলিশকে জানাতে হয়, অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। আবেদন প্রক্রিয়া শেষে গোয়েন্দা সংস্থা বা স্পেশাল ব্রাঞ্চ তদন্ত করে দেখে যে আবেদনকারীর সত্যিই নিরাপত্তা প্রয়োজন কিনা, নাকি তিনি কেবল প্রভাব খাটানোর জন্য এটি চাচ্ছেন। প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত দীর্ঘ এবং কঠোর যাচাই-বাছাইয়ের বিষয়। সাধারণত মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রোটেকশন বিভাগ অথবা স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে নিরাপত্তার জন্য গানম্যান বা বডিগার্ড নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, বডিগার্ড সাধারণত মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রটেকশন ইউনিট থেকে নিযুক্ত করা হয় এবং গানম্যান দেওয়া হয় স্পেশাল ব্রাঞ্চ বা বিশেষ শাখা থেকে।


সরকারি প্রটোকল বা পদাধিকার ভিত্তিতে রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরকারি গানম্যান বা সশস্ত্র দেহরক্ষী পান। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা (সচিব বা সমপর্যায়ের) এবং বাহিনী প্রধানরা এই ক্যাটাগরিতে পড়েন।  এছাড়া নিজস্ব বেতনভুক্ত লোক দিয়েও গানম্যানের কাজ করান অনেকে। এক্ষেত্রে ওই গানম্যানের নিজের নামে অস্ত্রের লাইসেন্স থাকতে হবে অথবা নিয়োগকর্তার অস্ত্রের লাইসেন্সে তাকে ‘রিটেইনার’ বা ব্যবহারকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

এছাড়া সরকার অনুমোদিত বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানিগুলো থেকেও নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে গানম্যান নেওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রেও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিশেষ অনুমতি প্রয়োজন।



রাজনৈতিক নেতারা এখন ব্যস্ত নিজেদের জন্য ব্যক্তিগত গানম্যান আর অস্ত্রের লাইসেন্স সংগ্রহ করতে। যত্রতত্র অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া মানে সমাজে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা। যখন কোনো নেতা অস্ত্র নিয়ে চলেন, তখন সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বাড়ে না বরং আতঙ্ক বাড়ে। 

একজন রিকশাচালক, শ্রমিক বা ছাত্রের জীবনের মূল্য কি একজন রাজনৈতিক নেতার চেয়ে কম? যদি দেশ নিরাপদ হয়, তবে সবার জন্য নিরাপদ হবে। আর যদি অনিরাপদ হয়, তবে কেবল নেতাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের নৈতিক দেউলিয়াপনা। জনগণ কোনো বিশেষ নিরাপত্তা চায় না, জনগণ চায় একটি নিরাপদ দেশ। 

(এহছান খান পাঠান, সম্পাদক)


সম্পাদকীয় এর আরও খবর: