বাজারে আসছে আরও ৫৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২০, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন | অর্থ ও বাণিজ্য

করোনাকালীন অর্থনীতিতে বাড়ছে নতুন টাকার সরবরাহ। এ প্রক্রিয়ায় আগস্টের মধ্যে ৫৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ধারণ করবে দেশের বাজার ব্যবস্থা। যার ৮২ শতাংশ বা ৪৫ হাজার কোটি টাকাই বাংলাদেশ ব্যাংক সরবরাহ দিচ্ছে রি-ইস্যুর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। আগের পুরোনো বা ব্যবহার অযোগ্য টাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে তুলে নিয়ে ওই টাকা অভিন্ন নম্বরেই নতুনভাবে পুনর্মুদ্রণ বা পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়াই হলো রি-ইস্যু উদ্যোগ। বাকি ১৮ শতাংশের (১০ হাজার কোটি) সংযোজন ঘটতে চলেছে করোনাকালীন সংকটে পড়া অর্থনীতির অতিরিক্ত তারল্যের চাহিদা মোটাতে। এর উদ্দেশ্য হলো ব্যাংক ব্যবস্থায় নগদ টাকার সরবরাহ বাড়িয়ে তারল্য পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল রাখা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা পরিচালন বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশে করোনা সংকট দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন লেনদেনের একমাত্র মাধ্যম টাকা ধারণ ও হাতবদলের ঝুঁকিও প্রবল হয়ে উঠছে। টাকার হাতবদল কেন্দ্রিক এ ঝুঁকি কমাতেই বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের মে থেকে পর্যায়ক্রমে পুরনো টাকা তুলে নিয়ে নতুন টাকার সরবরাহ বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, বড় পরিসরে নতুন টাকা ছাড়ার এ উদ্যোগ জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে আগস্ট পর্যন্ত চলবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, অতি পুরনো টাকাসহ কাটা, ছেঁড়া ও পোড়া নোট অর্থাৎ ব্যবহার অযোগ্য টাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে তুলে নেওয়া এবং সমপরিমাণ মুদ্রা রি-ইস্যুর মাধ্যমে তারল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মিত কাজ। তবে ঈদ উপলক্ষে সাধারণত নতুন টাকার সরবরাহ বেশি করা হয়। এ বছর রোজা ও কোরবানি দুইটি ঈদই এ করোনার মধ্যে পড়ে গেছে। সেজন্যই নতুন টাকা সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা এখানে নেপথ্য কারণগুলোর একটি বলতে পারেন। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এবার নতুন টাকা একটু বেশিই সবরাহ দিচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা প্রথম দফায় গত মে মাসের দিকে ব্যাংক ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে বড় পরিসরে ২৫ হাজার কোটি মূল্যমানের নতুন টাকা ছেড়েছিলাম। ওই টাকা এখন বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে হাতবদল হচ্ছে। ২০ জুলাইয়ের পরও আরেক দফায় আরও ৩০ হাজার কোটি নতুন টাকা ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। পর্যায়ক্রমে এ টাকা সরবরাহ দেওয়া হবে। ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে এ টাকা বাজার অর্থনীতিতেই ঘোরাফেরা করবে। ইতোমধ্যে টাকা ছাড়ার প্রস্তুতিপর্ব শেষ হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা পরিচালন বিভাগ সূত্রমতে, অর্থনীতির আকার বিবেচনায় নিয়ে সারাবছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক ৪০-৪৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট সরবরাহ করে থাকে। এ বছর দুই দফায় বড় পরিসরে নতুন টাকা ছাড়ার পদক্ষেপে মাত্র আড়াই মাসের ব্যবধানেই সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে চলেছে। যদিও বিগত বছরগুলোতে ঈদ উপলক্ষে নতুন নোটের চাহিদা মেটাতে সরবরাহকরা টাকা ১৬ থেকে ২০ হাজার কোটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এবার তার ব্যতিক্রম ঘটতে চলেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থনীতি সংকটের মধ্যে রয়েছে।
মানুষের আয় কমে গেছে। এ কারণে অনেক আগে থেকেই ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলার চাপ বেড়েছে। অপরদিকে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই নগদ টাকার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে হাত পাচ্ছে। ফলে বিশেষ প্রক্রিয়ার (রেপো ও বিশেষ তারল্য সহায়তা) আওতায় প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোকে কয়েক হাজার কোটি টাকা করে সরবরাহ দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এক লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তায়ন কাজও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এ কারণে রি-ইস্যুর বাইরে অতিরিক্ত মুদ্রার যোগান দিতেও বাংলাদেশ ব্যাংককে নতুন টাকা ছাঁপাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারিখাতের একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের একজন প্রধান নির্বাহী জানান, নতুন টাকার সরবরাহ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে তা বিষয়টি স্পষ্ট। আসছে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে তা আরও বেড়ে একটি নতুন উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছাবে, এতেও কোনো সন্দেহ নেই। আগের বছরগুলোর সঙ্গে চলতি বছরের নতুন টাকার সরবরাহ পরিস্থিতির তুলনা করলেই তো বাজারে নতুন টাকার বাড়তি আধিপত্য কতটা বেড়েছে এবং বাড়তে যাচ্ছে তা টের পাওয়ার কথা।
তিনি আরও দাবি করেন, ঈদকেন্দ্রিক চাহিদা মেটানোর পর চাপ পড়বে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে তারল্য যোগানের ওপর। সেই টাকার যোগান দিতে আমি মনে করি বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও টাকা ছাপাতে হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রা পরিচালন বিভাগ জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় নতুন টাকা ছাড়ার প্রক্রিয়ায় ১০০০ টাকার নোটও স্বল্প পরিমাণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভল্টে পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় রোজার ঈদে এ টাকা তখন সরবরাহ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া বাজারে প্রচলিত ৫০০ টাকা, ২০০ টাকা, ১০০ টাকা, ৫০ টাকা, ২০ টাকা এবং ১০ টাকার সব নোটই রি-ইস্যু প্রক্রিয়ায় ছাড়া হবে।