বাঙালির মানব সম্পদউন্নয়ন নীতি এবং শিক্ষিত বেকার
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারী ২০২৪, ০৯:৩৮ অপরাহ্ন | মতামত
মুঃ আবদুল হাকিম:
এটা অস্বীকার করার যো নেই যে ধর্ম ,বর্ণ এবং গোত্র নির্বিশেষে পৃথিবীর বিভিন্ন মানচিত্রে বিভক্ত বাঙালি একটি বুদ্ধিদীপ্ত এবং শান্তিবাদী মানব সম্পদ । মানব জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপরোগ ব্যাধি এবং বেকারত্ব। আমাদের দেশে অধিকাংশ গরীব পরিবার ব্যয়বহুল চিকিৎসা খরচ যোগাতে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।বাঙালিকে এটা বুঝানো মুশকিল যেডাক্তার দেখিয়ে এবং ঔষধ খাইয়ে কোনো জাতিকে সুস্থ করা যায় না।স্বাস্থ্য লুকিয়ে আছেভেজালমুক্ত ফলের দোকান ,কাঁচাবাজার,হোটেল রেস্তোরাঁএবং কনফেকশনারীগুলোতে ।কায়িক পরিশ্রম,ব্যায়াম,মেডিটেশন,ভাল লাইফ স্টাইল এবংফুড হ্যাবিটে। এ চিকিৎসা বাণিজ্য বন্ধ করতে হলে জিরো ট্যাক্সে বেশি বেশি হেলথ ইন্সুরেন্স কোম্পানি খোলার সুযোগ দিতে হবে। শিক্ষা ও নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করতে হলেজিরো ট্যাক্সে বেশি বেশি মানব সম্পদ উন্নয়ন কোম্পানি খোলার সুযোগ দিতে হবে। শিক্ষার ১ম লক্ষ্যহওয়া উচিৎ দারিদ্র্য এবং বেকারত্ব দূরীকরণ।বেকার তৈরীর জন্য শিক্ষার কোনো প্রয়োজন নেই। কর্মক্ষম করার জন্য শিক্ষা। কর্মে অক্ষম করার জন্য নয়।শিক্ষার আলো এবং দারিদ্রের অন্ধকার কখনো একসাথে বসবাস করতে পারে না। মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক প্রণীতমাষ্টার প্ল্যান অনুযায়ী দেশের সব কর্মক্ষম মানুষকেআধুনিক যুগে কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত রাখা অসম্ভব কোনো ব্যাপার নয়। একজন শিক্ষিত গ্রাজুয়েটকে কোনোক্রমেই তার পরিবারের বোঝা হতে দেয়া যায় না। প্রত্যেক শিক্ষিত গ্রাজূয়েটকে একটি গ্রাজুয়েট বাহিনীর অন্তর্ভূক্ত সৈনিক হিসেবে শিক্ষিত বেকারত্ব নিয়ে ভাবতে এবং গবেষণা করতে হবে। তাহলে এদেশে একজন শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েটও বেকার থাকবে না এবং এটাই হবে কোয়ালিটি শিক্ষার এক নম্বর প্যারামিটার।
গ্রাজুয়েটদের মধ্যে নিজস্ব অধিকার এবং দাবি দাওয়া নিয়ে আলাপ আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিতে হবে। একজন শিক্ষিত বেকার সবার আগে চায় কর্মসংস্থান, উপার্জন, চাকুরি, বেতন , সুস্থতা, নিরাপত্তা, পুঁজি ইত্যাদি। এসব ন্যায্য দাবিগুলো যাতে তারা আদালতে মামলা করে আদায় করে নিতে পারে তার জন্য উপযুক্ত আইন এবং আইনী কাঠামো নির্মাণ করতে হবে। শুন্যহারে কর্পোরেট করের সুবিধা দিলেই হাজার হাজার প্রাইভেট কোম্পানি তাদের নিজস্ব প্রতিভা এবং সৃজনশীলতা নিয়ে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানে এগিয়ে আসতে পারে। এ কোম্পানিগুলোকে স্টুডেণ্ট সার্ভিস কোম্পানি বা এস এস সি কোম্পানি নামে অভিহিত করা যায়। এদের প্রধান কাজ হবে অল্প বেতনে সেবাখাতে ছাত্রদের পার্ট টাইম নিয়োগ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা যাতে তারা দেশ বিদেশে খুব সহজে নিয়োগ লাভ করতে পারে।
কোনো পেশাকে জবাবদিহিতার বাইরে রাখা উচিৎ নয়। আমরা সাধারণতঃ নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে তথ্য লুকিয়ে রাখতে অভ্যস্ত। তথ্য উন্মুক্ত করে দিলে দুর্নীতি এমনিতেই অনেকটা কমে যায়।মানুষের জানবার জন্য তথ্য প্রস্তুত করা হয় ।অনেক সময় হীনস্বার্থে তা লুকিয়ে রাখা হয়। কাজেই এটা লুকিয়ে রেখে জনস্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব নয়। অপরাধ ও দুর্নীতি কমে যাওয়া কোয়ালিটি শিক্ষার দু নম্বর প্যারামিটার হতে পারে । দুর্ঘটনা এবং রোগব্যাধি কমে যাওয়া কোয়ালিটি শিক্ষার তিননম্বর প্যারামিটার হতে পারে ।আউটকাম দেখে শিক্ষার গুণ বিবেচনা করতে হবে। ভাল রাজনীতি, ভাল প্রশাসন, ভাল আইন, ভাল তথ্য এবং ভাল বিচারও কোয়ালিটি শিক্ষার অন্যতম আউটকাম বা প্যারামিটার হতে পারে । এগুলো আসে কোয়ালিটি সামাজিক বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের সামাজিক গবেষণার ফলাফল থেকে।এ পৃথিবীতে মানুষের শরীরের বোগব্যাধি নিয়ে যত গবেষণা হয়েছে তার অর্ধেকও সমাজ ও রাষ্ট্রের রোগব্যাধি নিয়ে হয়নি। অথচ সমাজ ও রাষ্ট্রের রোগ ব্যাধিগুলোর জন্য মানুষের মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি অনেক অনেক গুণ বেশি। শিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে যথাযথ গুরুত্ব বা অগ্রাধিকার না দেয়ার খেসারত সমাজ ও রাষ্ট্রগুলোকে প্রতিনিয়তঃ নানাভাবে দিতে হচ্ছে। এমন কি আমাদের শরীরের অনেক রোগব্যাধির বিস্তৃতি ঘটছে সমাজ ও রাষ্ট্রের রোগ ব্যাধি থেকে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, গুরুতর অপরাধ,ধর্ষণ, দুর্ঘটনা, রোগব্যাধি, যুদ্ধ, সংঘাত, সংঘর্ষ,জংগিবাদ, রক্তপাত, হানাহানি, মারামারি, খুনাখুনি, অব্যবস্থাপনা, অপশাসন,অবিচার, অত্যাচার, বিচারহীনতা, নৈরাজ্য, খাদ্য সঙ্কট, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, শোষণ, বঞ্চনা, অস্বচ্ছতা, অজবাবদিহিতা ইত্যাদি সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাধি। সব মিলিয়ে এগুলোকে সোশ্যাল প্যাথোলজি বলা যেতে পারে। কিন্তু এগুলোর উপর সরাসরি কোনো অনার্স, মাস্টার্স বা পি এইচ ডি ডিগ্রি কোনোবিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া হয় না।আমাদের সামাজিক বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাবলিক পলিসি লিটারেচার নেই বললেই চলে।রাষ্ট্রবিজ্ঞান যারা পড়ছে তারা রাষ্ট্র নিয়ে ভাবছে না।সমাজ বিজ্ঞান যারা পড়ছে তারা সমাজ নিয়ে ভাবছে না। আমাদের পড়াশুনা ছাত্রজীবনে সীমাবদ্ধ।ফলে এদেশে নীতিচিন্তা চর্চার কোনো সংস্কৃতি গড়ে ওঠছে না।এজন্য আমাদের রাষ্ট্রে সংস্কারের কোনো ধারা এখনো চালু হয়নি। রাষ্ট্রের নীতিকাঠামোগুলো জনস্বার্থে সংস্কার হবার পূর্বশর্ত হচ্ছে বিদ্যমান রাজনীতিকে ধীরে ধীরে নলেজ পলিটিক্সে রূপান্তরিত করা ।এজন্য সামাজিক বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মেধার ভিত্তিতে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় রোগ ব্যাধির আধুনিক ক্লিনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের মানব সম্পদকে বিরতিহীন অব্যাহত শিক্ষার মাধ্যমে নিত্য নতুন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ উৎপাদনে সুদক্ষ বানাতে হবে।
বাংলাদেশের এলামনাই সমিতিগুলো নলেজ সমিতি হিসেবে নয়- পিকনিক পার্টি হিসেবে কাজ করছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেও এরা চিন্তাহীন প্রাণী হিসেবে জীবন জাপন করছে।ছাত্র জীবন সমাপ্তির পর জ্ঞানের সাথে তারা সমস্ত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিষ্ক্রিয় জীবন বেছে নিয়েছে।শিক্ষিত গ্রাজূয়েটদের ইকোনোমিক আর্মি হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব ।এদেরকে রাষ্ট্রীয় তথ্য ভাণ্ডার গঠন এবং দুর্নীতি দমনে ব্যবহার করা যেতে পারে। এস এসসি গ্রাজুয়েটদের ক্ষমতায়নের জন্য ভোটের বয়স দু বছর নামিয়ে ষোল করা যেতে পারে। এতে করে ছাত্র সমাজ রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে বিবেচিত ও বিকশিত হবেএবং নীতি নির্ধারকদের বেকারত্ব নিরসনে চাপ সৃষ্টি করতে পারবে।
জাতীয়তাকে সব সময় রাষ্ট্রীয় সীমানা পিলার দিয়ে সীমায়িত করা যায় না। শিক্ষা ব্যবস্থার কোথাও কোনো মারাত্মক গলদ না থাকলে নানা কর্মযজ্ঞে ভরা এ বিশ্বে একজন শিক্ষিত বাঙালি কোনোক্রমেই বেকার থাকতে পারে না।দেশের অর্থ সম্পদের সাথে মানব সম্পদের একটা জ্ঞানভিত্তিক সমন্বয় সময়ের দাবি। Learning মানে হবে Earning। শক্তিমান রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে তা নিশ্চিত করা।এস এস সি পাশ করার সাথে সাথে একজন গ্রাজুয়েটকে কোনো না কোনো ব্যাংকের সাথে সংযুক্ত করে দেশের আর্থিক যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হবে তার আর্থিক অন্তর্ভূক্তি। বাঙালিকে শুধূ দেশীয় নয়- বিশ্বমানের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং ডলার আয় করার জন্য বিশ্ববাজারে ছেড়ে দিতে হবে। ছাত্ররা সম্পদ শুমারি এবং কর জরিপের সাথে যুক্ত থাকতে পারে।এদেশে করদাতার সংখ্যা ত্রিশ পঁয়ত্রিশ লাখ। অথচ করযোগ্য নাগরিক প্রায় এক কোটি। আবার বড় বড় ধনীরা বড় বড় কর ফাঁকির সাথে জড়িত। ছাত্রদের অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ বাহিনীতে ঘণ্টা চুক্তিতে পার্ট টাইম কাজ করানো যেতে পারে । এদের কাজ হবে দেশে করযোগ্য নাগরিক সনাক্ত করা, দুর্নীতি, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মান এবং কর রিটার্ণ গুলো সরেজমিনে অডিট করা।
বাঙালি মনস্তত্ত্বে বহুমুখী শিক্ষার প্রভাব নিয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো গবেষণা নেই। এর ফলে জংগিবাদ, মৌলবাদ, উগ্রবাদ,উন্মাদনাবাদ, আত্মহননবাদ, আতংকবাদ,ভয়বাদ, চরম চিন্তাবাদ, হুজুগবাদ, নৈরাজ্যবাদ, চেতনাবাদ ইত্যাদির অস্বস্তিকর বিস্তৃতি ঘটছে কিনা কিংবা এতে বাঙালির মনস্তাত্ত্বিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন হচ্ছে কিনা তা গবেষণা ব্যতিরেকে নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না।দুটি আলাদা রাষ্ট্রে বসবাস করলেও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ত্রিশ কোটি বাঙালি চলনে, বলনে, স্বভাবে, আচরণে, চলাফেরায় একটি অভিন্ন, অখন্ড এবং অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তা যা নির্বিঘ্নে বিকশিত হতে পারে কেবলমাত্র উদার ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে।শান্তিবাদী এবং বুদ্ধিবাদী বাঙালি নাগরিক তৈরী করতে হলে ধর্মান্তর, দলান্তর,মতান্তর এবং দেশান্তরকে উদার মনোভাব নিয়ে গ্রহণ করতে হবে।পরমত সহিষ্ণুতা অনুশীলন করার জন্য একদলের কর্মীকে অন্য দলে এক বছরের জন্য প্রেষণে নিয়োগ করা যেতে পারে।কর্মীদের সুস্থ রাজনীতি চর্চার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। কোনো ধর্ম যদি মুরতাদের মৃত্যুদন্ড অনূমোদন করে তাহলে অন্যান্য ধর্মও তা অনুসরণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে যুদ্ধ অনিবার্য। আর আধুনিক যুদ্ধ মানে ব্যাপক গণহত্যা।বাঙালি হিন্দু মুসলমানের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য উদার ধর্মনিরপেক্ষতার কোনো বিকল্প নেই। কারণ তা সকল ধর্মের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করে।শ্রষ্টার ভয় ছাড়া অন্যান্য সকল ভয় মানুষের জন্য নেতিবাচক। পরকাল ভীতির জন্য কট্টর ধর্মনিরপেক্ষতায় ধর্মভীরু মুসলমানদের তীব্র আপত্তি আছে। কেননা এ কট্টর মতবাদ ধর্ম বা ইসলামকেই বাংলাদেশ থেকে মাইনাস করতে চায়যা বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সেণ্টিমেণ্টের বিপরীত ।কর্মসংস্থানের গ্যারান্টি দিলে ধর্মভীরু মুসলমানদের আস্থায় নিয়ে একীভূত প্রাথমিক শিক্ষা এদেশে সম্ভব। মহান আল্লাহর উপর বিশ্বাস নিয়ে মরণ অধিকাংশ মুসলমানদের মনোবাসনা। এক্ষেত্রে অবিশ্বাস নিয়ে মৃত্যুর ঝূঁকি নেয়া তাদের কাছে নরকেযাওয়ার সামিল । অশিক্ষা , কুশিক্ষা এবং ভুল শিক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান মনস্ক করার পরিবর্তে জাতিকে লড়াকু, যুদ্ধংদেহী, আত্মঘাতী এবং জেহাদীবানানো হচ্ছে। নলেজ অর্থনীতি, নলেজ রাজনীতি, নলেজ ব্যবসা, নলেজ প্রশাসন এবং নলেজ বিচারের অমিত সম্ভাবনাকে বিপন্ন করা হচ্ছে।সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও স্বাধীনতার বায়ান্ন বছর পরও অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চাহিদা মাথায় রেখে জাগতিক এবং ধর্মীয় শিক্ষার সংমিশ্রণে এস এস সি পর্যন্ত একমুখী প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা সম্ভব হয়নি।বাঙালি জাতীয়তাবোধ মজবুত করার জন্য যা অপরিহার্য ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার সাথে ধর্মীয় শিক্ষাকে একীভূত না করলেসারা দেশ ব্যাপী একমুখী শিক্ষা চালু করা অসম্ভব ।উচ্চ পর্যায়েবহুমুখী শিক্ষার পক্ষে অনেক যুক্তি আছে ।কারিকুলাম ও সিলেবাস বিনিয়োগ ও কর্মবান্ধব নয়।
সব দেশে নতুন নতুন কর্মসৃজনে এগিয়ে থাকে বেসরকারি খাত। কিন্তু আমাদের দেশে নীতি সহায়তার অভাবে বেসরকারি খাত অনুন্নত। বেসরকারি খাত উন্নয়নের জন্য অন্যান্য দেশের মত কোনো কমিশন আমাদের দেশে নেই।আবার কারিকুলাম এবং সিলেবাস প্রণয়নে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে দেশে অথবা বিদেশে নিয়োগযোগ্য দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী হচ্ছে না।কাজের জন্য বিদেশগামীদের অধিকাংশই অদক্ষ। কোম্পানি স্বল্পতার জন্য দেশে শিক্ষার প্রতিযোগিতামূলক কর্পোরেটশ্রম বাজার সৃষ্টি হয়নি।ফলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য একমাত্রভরসা সরকারি খাত। এখানে নিয়োগ বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ আছে । অথচ কর্পোরেট করের হার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে অশিক্ষিত লোকের তুলনায় শিক্ষিত লোকের দাম মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিপুল সংখ্যায় উদ্যোক্তা প্রস্তুত করা সম্ভবহয়নি। প্রস্তুত করা হয়নি শিক্ষিত গ্রাজুয়েটদের নির্ভুল শুমারি। সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও শিক্ষিত বেকারগণ এখনো ভাতার আওতায় আসেনি। অভিভাবকদের বিপুল বিনিয়োগ এবং ছাত্রছাত্রীদের ত্রিশ বছরের কঠোর শ্রমতাদের বাকি জীবনে কোনো কাজে আসছে না।শিক্ষা এবং চাকুরির জন্য বয়সের কোনো সীমানা বেঁধে দেয়া সমীচীন নয়। শিক্ষা এবং মেধা মেয়াদূত্তীর্ণ কোনো বিষয় নয়।এটা আজীবন মানুষের কাজে লাগে।ত্রিশ বছরের অক্লান্ত সাধনায় অর্জিত সনদগুলো অন্ততঃ প্রাইভেট সেক্টরে কাজে লাগানো যায়।উচ্চসুদের জন্যপ্রাইভেট সেক্টর ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার থেকে স্বল্প খরচে তহবিল যোগাড় করতেপারছে না। যার দরূণ প্রাইভেট সেক্টরে ব্যবসা বাণিজ্য বা বিনিয়োগের প্রসার ঘটছে না্। শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য আশানুরূপ বিদেশী বিনিয়োগও আমরা আনতে পারছি না।
অর্জিত জ্ঞানের মোক্ষম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে পরিকল্পনা কমিশনের অধীনে একটি মানব সম্পদ উন্নয়ন বিভাগ দরকার। এটা না থাকার জন্য পরিকল্পনা কমিশনে মানব সম্পদ উন্নয়ন অগ্রাধিকার পায় না।এর ফলে কমিশনের মতামত ছাড়াই সিলেবাস ও কারিকুলাম প্রণীত হয়। শিক্ষিত মানুষকে অর্থনৈতিক এবং ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত রাখার জন্য অর্থবাজার ও পুঁজিবাজারকে পরিকল্পনা কমিশনের সাথে সম্পৃক্ত রাখা দরকার।তাহলে কমিশন শিক্ষিত যুবকদের শুমারি করে মাস্টার প্ল্যান বানাতে পারবে। শিক্ষিত বেকারত্ব সমস্যার সমাধানে আন্তরিক হলে এমনতর অনেক নীতিসিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করতে পারি।
মুঃ আবদুল হাকিম (অবঃ যুগ্মসচিব)