পরিবার: সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির ভিত্তিমূল
প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২৫, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন | মতামত

ড. মাহরুফ চৌধুরী:
মানবজীবনের প্রথম শিক্ষালয় হলো পরিবার। জন্মের পর থেকেই শিশু যেই পরিবেশে বড় হয়, সেটিই তার ব্যক্তিত্ব গঠনের প্রথম ও প্রধান ক্ষেত্র। পরিবারই সেই কেন্দ্র যেখানে চরিত্র, মূল্যবোধ, নৈতিকতা এবং মানবিক অনুভূতির বীজ রোপিত হয়। একজন মানুষের চিন্তাভাবনা, আচরণ, দায়িত্ববোধ, এবং ন্যায়ের প্রতি আনুগত্য এসবের গোড়াপত্তন হয় এই প্রাথমিক সামাজিক প্রতিষ্ঠানটিতে। জার্মান দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪) মতে, ‘নৈতিক শিক্ষা ছাড়া কোনও মানুষ প্রকৃত অর্থে মানুষ হয়ে উঠতে পারে না’। এই নৈতিক শিক্ষারই প্রথম পাঠ শুরু হয় পরিবারে। পরিবারে শিশুরা যেমন ভালোবাসা, সহমর্মিতা, শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ শেখে, তেমনি ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, অধিকার-দায়িত্বের পার্থক্য সম্পর্কেও ধারণা পেতে থাকে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, পরিবার একটি ‘প্রাথমিক সামাজিকীকরণ কেন্দ্র’ যেখানে নাগরিকত্বের ভিত্তিমূল তৈরি হয়। অতএব একটি সুস্থ, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন পরিবারই পারে ভবিষ্যৎ সুনাগরিক ও ন্যায়পরায়ণ শাসক গড়ে তুলতে, যারা কেবল নিজের স্বার্থে নয়, বরং ‘দেশ ও দশের কল্যাণে’ কাজ করতে প্রণোদিত হবে।
রাষ্ট্র যদি একটি গাছ হয়, তবে পরিবার সেই গাছের শেকড়। শেকড় যত মজবুত হয়, গাছও তত ফলদায়ী ও স্থিতিশীল হয়। সুতরাং একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের জন্য পরিবারকে কেবল সামাজিক কাঠামোর একটি অংশ হিসেবে নয়, বরং রাষ্ট্রগঠনের প্রাথমিক ও মৌলিক ভিত্তি হিসেবে পুনর্চিন্তা ও পুনর্গঠন করা জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, শিশুর মানসিক বিকাশ ও চরিত্রগঠনে তার আশপাশের মানুষ বিশেষত পিতা-মাতা ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের আচরণ, ভাষা, চিন্তাধারা ও জীবনদর্শন এক অদৃশ্য কিন্তু সুগভীর প্রভাব ফেলে। শিশু দেখেই শেখে অনুকরণ ও অভ্যাসের মাধ্যমে। পিতার সততা, মায়ের সহমর্মিতা, কিংবা পরিবারের সম্মিলিত নৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধরন এসবই শিশুর মানসিক গঠনের অঙ্গ হয়ে ওঠে। এ কারণেই প্রখ্যাত অস্ট্রিয়ান মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েড (১৮৫৬-১৯৩৯) পারিবারিক অভিজ্ঞতাকে ব্যক্তিত্ব বিকাশের কেন্দ্রীয় উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে, ‘বাল্যকালের পারিবারিক অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনের নৈতিক অবস্থান ও সিদ্ধান্তে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে’।
এই পর্যায়ে পারিবারিক শিক্ষা কেবল সামাজিকীকরণের একটি স্তর নয়; বরং এটি হলো ন্যায়বোধ, দায়িত্বশীলতা ও বিবেকবোধের গোড়াপত্তনের প্রক্রিয়া। একজন শিশু যখন পরিবারের মধ্যে দায়িত্বের বণ্টন, মতের পার্থক্যে সহনশীলতা, কিংবা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সংস্কৃতি দেখে, তখন সে ন্যায়পরায়ণতা ও নেতৃত্বের মৌলিক গুণাবলি আয়ত্ত করতে শেখে। এই শিক্ষাই তাকে ভবিষ্যতে একজন সুনাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত করে এবং সম্ভাব্য সুশাসকের আদলে গড়ে তোলে। সুইস দার্শনিক রুশো (১৭১২-১৭৭৮) বিশ্বাস করতেন যে, ‘একজন মানুষ তখনই প্রকৃত নাগরিক হয়ে ওঠে, যখন তার হৃদয়ে ন্যায়ের বোধ জন্ম নেয়’। আর সেই বোধের বীজ সবচেয়ে স্বাভাবিকভাবে জন্ম নেয় পরিবার নামক ছোট্ট কিন্তু গভীর জীবন-পাঠশালায়। অতএব পরিবারের গুণগত সংস্কার ছাড়া নাগরিক চরিত্র কিংবা সুশাসকের নৈতিক নির্মাণ সম্ভব নয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের সমাজের বহু পরিবারে এখনো ‘শাসন’ ও ‘শৃঙ্খলা’কেই শিক্ষাদানের একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমন পারিবারিক পরিবেশে শিশুর স্বাধীন চিন্তা, প্রশ্ন করার অধিকার এবং সৃজনশীলতার প্রকাশকে ‘অবাধ্যতা’ কিংবা ‘অপমানজনক আচরণ’ হিসেবে দেখা হয়। শিশুর মানসিক বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে এই ধরনের দমনমূলক আচরণ শুধু ব্যক্তিত্ব বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে না, বরং তাকে ভীত, অনিরাপদ ও আত্মসন্দেহপূর্ণ এক অস্তিত্বে পরিণত করে। জার্মান বংশোদ্ভুত মার্কিন মনোবিজ্ঞানী এরিক এরিকসনের (১৯০২-১৯৯৪) ‘মনোসামাজিক উন্নয়ন’ (সাইকোসোসাল ডেভলপমেন্ট) তত্ত্ব অনুযায়ী, শিশুর শৈশব ও কৈশোর পর্ব আত্মপরিচয় নির্মাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টিতে আত্মপ্রকাশ, প্রশ্ন করার সুযোগ এবং নিজের সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস, নৈতিক স্পষ্টতা ও ভবিষ্যতের জন্য নেতৃত্বদানের সক্ষমতা গড়ে তোলে। কিন্তু যখন পরিবারেই এসব গুণাবলি বিকাশের ক্ষেত্র রুদ্ধ করা হয়, তখন শিশুর মধ্যে আত্মদ্বন্দ্ব ও আত্মসন্দেহ জন্ম নেয়। এর ফলস্বরূপ সে হয় নীরব অনুগত কিংবা বিদ্রোহী, কিন্তু কখনোই পরিপূর্ণ মানুষ কিংবা দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠে না।
শাসন যদি ভালোবাসা ও যুক্তির ভিত্তিতে না হয়, তবে তা হয়ে দাঁড়ায় একপ্রকার মানসিক নির্যাতন বা নিপীড়ন। এর ফলে পারিবারিক সম্পর্কেও বিশ্বাস ও সংলাপের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ে। এমন একটি সংস্কৃতি থেকে যদি নাগরিকেরা বেরিয়ে আসে, তবে রাষ্ট্রেও তারা হয়ে ওঠে নতজানু, আত্মবিশ্বাসহীন ও কর্তৃত্ববাদে অভ্যস্ত এক জনগোষ্ঠী যাদের পক্ষে ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন দুরূহ হয়ে পড়ে। অতএব শিশুদের মানসিক বিকাশ ও নৈতিক নির্মাণের জন্য পরিবারকে শাসনের গণ্ডি ছাড়িয়ে সহানুভূতিশীল, যুক্তিনির্ভর ও মূল্যবোধভিত্তিক এক শিক্ষাকেন্দ্রে পরিণত করতেই হবে। অন্যদিকে, একটি পরিবার যদি সহমর্মিতা, সংলাপ ও সহযোগিতার চর্চাস্থলে পরিণত হয়, তবে তা শিশুর মানসিক, নৈতিক ও সামাজিক বিকাশে একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করে। এই ধরনের পরিবেশে শিশুর মধ্যে মানবিক গুণাবলি যেমন করুণা, দায়িত্ববোধ ও সহনশীলতা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। পরিবার যখন শিশুর কথাকে গুরুত্ব দেয়, তার অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, তখন শিশুর আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং সে শেখে যে, মতের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও সম্মান ও সমঝোতার ভিত্তিতে সহাবস্থান সম্ভব।
এই সহনশীল ও সংলাপনির্ভর পারিবারিক সংস্কৃতি বৃহত্তর সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ একটি সহানুভূতিশীল পরিবারের সন্তান যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় ন্যায়ের আলোকে, প্রতিপক্ষের প্রতি ঘৃণা নয় বরং যুক্তিপূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রেখে। এর ফলে গড়ে ওঠে একটি অংশগ্রহণমূলক, মানবিক ও সুশাসনভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। নরওয়েজিয়ান সমাজতাত্ত্বিক ইয়োহান গালটুঙ (১৯৩০-২০২৪) তাঁর 'ইতিবাচক শান্তি’ (পজিটিভ পিস) ধারণার ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘শান্তি কেবল সংঘাতের অনুপস্থিতি নয়, বরং তা একটি ন্যায়ভিত্তিক সামাজিক সম্পর্কের ফল’। পারিবারিক পরিসরে যদি এই ‘ইতিবাচক শান্তি’-এর ভিত্তি গড়ে ওঠে, তবে তার সম্প্রসারণ রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও সম্ভব হয়। অতএব পরিবারে সহানুভূতির চর্চা ও সংলাপভিত্তিক সম্পর্ক একদিকে যেমন শিশুকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে ন্যায়পরায়ণ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও গঠনমূলক ভূমিকা রাখে।
কিন্তু আমাদের সমাজে ‘সম্মান’ ধারণাটি অনেক সময়েই একটি ভুল ও বিকৃত অর্থে উপস্থাপিত হয় যেখানে সম্মান মানে হয়ে দাঁড়ায় নিঃশব্দ আনুগত্য, প্রশ্নহীন অনুসরণ এবং প্রবীণতার সামনে আত্মসমর্পণ। এই দৃষ্টিভঙ্গির পেছনে আছে এক ধরনের ক্ষমতাকেন্দ্রিক মানসিকতা, যা পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এমনকি রাষ্ট্রপর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। এর ফলে শিশু বা তরুণদের স্বাভাবিক প্রশ্ন করার প্রবণতা, যুক্তির অনুসন্ধান এবং আত্মপ্রকাশের অধিকার একধরনের ‘অপরাধে’ রূপান্তরিত হয়। সম্মান তখন হয়ে পড়ে আত্মসম্মানের দমন এবং ব্যক্তিত্বের বিলুপ্তির নামান্তর। এই প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি শুধু তরুণ প্রজন্মের চিন্তাশীলতা, সৃজনশীলতা ও আত্মপ্রত্যয়কেই নিঃশেষ করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বেও একধরনের কৃত্রিমতা, নিষ্ক্রিয়তা ও কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা তৈরি করে। এ ধরনের নেতৃত্ব জনমতকে গুরুত্ব না দিয়ে উপরের নির্দেশ মানতে শেখে, ফলে গণতন্ত্রের ভিত দুর্বল হয়। ব্রিটিশ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল (১৮০৬-১৮৭৩) তাঁর ‘অন লিবার্টি’ (স্বাধীনতা বিষয়ক) গ্রন্থে বলেছিলেন, ‘যে সমাজ প্রশ্ন করতে নিরুৎসাহিত করে, সে সমাজই অন্ধ আনুগত্য এবং একনায়কত্বের জন্ম দেয়’।
একটি মানবিক, মুক্ত ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনের জন্য তাই প্রয়োজন এমন পারিবারিক পরিবেশ যেখানে ‘সম্মান’ বলতে বোঝায় পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং যুক্তিনির্ভর সংলাপের চর্চা। প্রশ্ন করার অধিকার এবং যৌক্তিক মতবিনিময় শুধু শিশুর আত্মবিকাশই নিশ্চিত করে না, বরং ভবিষ্যতের নেতৃত্বকে করে মানবিক, বিবেকবান ও ন্যায়নিষ্ঠ। ফলে পরিবার যদি অনুকরণযোগ্য নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়ভিত্তিক আচরণের শিক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়, তবে তার নেতিবাচক প্রতিফলন সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনিবার্যভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। পরিবারই যখন ন্যায়ের শিক্ষা দিতে পারে না, তখন সমাজে অন্যায়, বৈষম্য, সহিংসতা কিংবা দমন-পীড়নকে 'নিয়ম' হিসেবে মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। দুর্নীতিকে তখন চতুরতা, ক্ষমতার অপব্যবহারকে 'সফলতা' এবং কর্তৃত্ববাদকে 'শৃঙ্খলা' বলে চিহ্নিত করা হয়। এভাবেই অপসংস্কৃতি ও অনৈতিকতার স্বাভাবিকীকরণ ঘটে যার শিকড় থাকে পরিবার নামক প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানটির ব্যর্থতায়।
এমন প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের পক্ষে ন্যায়, মানবিকতা ও গণতন্ত্রের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। ইতালীয় মার্ক্সীয় সমাজতাত্ত্বিক আন্তোনিও গ্রামশির (১৮৯১-১৯৩৭) মতে, ‘প্রত্যেক প্রাতিষ্ঠানিক সংকটের পেছনে একটি সাংস্কৃতিক সংকট লুকিয়ে থাকে’। যদি পরিবারের ভেতরে সাংস্কৃতিক ও নৈতিক সংকট লালিত হয়, তবে রাষ্ট্রের উচ্চমঞ্চেও তার প্রতিধ্বনি অনিবার্য। তাই সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির জন্য প্রথমেই দরকার এমন পরিবার, যেখানে শিশু ন্যায়, সহানুভূতি, সংলাপ এবং আত্মসম্মানের শিক্ষা পায়। এটি নিছক সময়ের দাবি নয়; বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক, কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনের পূর্বশর্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণেও পারিবারিক শিক্ষার এই গুরুত্বকে অগ্রাধিকার দিতে হবে যাতে পরিবার আবার হয়ে উঠতে পারে এক মহান জাতি গঠনের নির্ভরযোগ্য ভিত্তিমূল। সুতরাং একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের পথে ‘পরিবার’ কেবল একটি ব্যক্তিগত বা সামাজিক ইউনিট নয় বরং তা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রূপকল্পের ভিত্তিমূল। পরিবার থেকেই জন্ম নেয় সুনাগরিক, যারা সমাজে ন্যায় ও মানবিকতার আলো ছড়িয়ে দেয়; এবং পরিবার থেকেই উঠে আসে সম্ভাব্য সুশাসক, যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ন্যায়ের বাস্তবায়ন ও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে। যদি আমরা পরিবারে মূল্যবোধ, নৈতিকতা ও সংলাপনির্ভর সংস্কৃতিকে পুনরুদ্ধার করতে না পারি, তবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের আশা করাও হবে আত্মপ্রবঞ্চনার নামান্তর।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান-উত্তর রাষ্ট্রসংস্কারের জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে এই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের পথরেখা হতে পারে ব্যাপক জনশিক্ষা যা পরিবারের অপসংস্কৃতি, বৈষম্যমূলক মানসিকতা ও কর্তৃত্ববাদী আচরণকে চ্যালেঞ্জ করবে এবং মানুষকে নৈতিক ও মানবিক পরিবারের ধারণার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ‘রাষ্ট্রকে বদলাতে হলে পরিবার থেকে সেই পরিবর্তনের জন্য কাজ শুরু করো’—এই প্রজ্ঞাপ্রসূত প্রতীতিই হোক আমাদের আগামীর পথচলা। সুনাগরিক ও সুশাসক তৈরির প্রক্রিয়া ছোট স্তর (মাইক্রো লেভেল) তথা ‘পরিবার’ থেকে শুরু না হলে এবং আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও নীতিনির্ধারণে সে প্রক্রিয়ার সহায়ক প্রচেষ্টা প্রতিফলিত না হলে বাংলাদেশ কখনোই প্রকৃত অর্থে একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও কল্যাণকামী রাষ্ট্রে রূপ নিতে পারবে না। এখন সময় পরিবারকে রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রবিন্দুতে এনে এক নতুন বাংলাদেশ নির্মাণে সবার সম্মিলিতভাবে কাজ করার।