ইসলামি জীবনবিমা : এক নতুন দিগন্ত
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন | মতামত
এ বি এম সাইফুল ইসলাম : :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা কুরআনুল কারীমে বলেন- ‘তোমরা পরস্পর কল্যাণ ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতা করো আর তোমরা একেঅপরকে পাপাচার ও সীমালংঘনমূলক কাজে সহযোগিতা করোনা।’ (সূরা মায়িদা: ২)
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান, ইসলামি শরিয়া কেবলমাত্র ধর্মীয়ভাবে প্রয়োগের জন্য নয়, আর্থ-সামাজিক সকল কর্মকাণ্ডে ইসলামের বিধি-বিধান প্রয়োগ একান্ত অপরিহার্য। মানবসমাজের জন্য কল্যাণকর বা মঙ্গলজনক কিংবা এমনকিছু যা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে তা ন্যায়, সুবিচার, সাম্য বজায় রেখে প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন ইসলাম অনুমোদন করে, প্রয়োজন কেবল ইসলামি শরয়ী নীতিমালার আলোকে তা পরিশোধন। তেমনই একটি বিষয় ইসলামি জীবনবিমা বা তাকাফুল। প্রচলিত জীবনবিমার বিপরীতে সারা বিশ্বে আজ ইসলামি জীবনবিমার জয়জয়কার।
ইসলামি জীবনবিমা :
ইসলামি জীবনবিমা সমবায় ভিত্তিতে গড়ে উঠা এক আর্থিক ব্যবস্থাপনা, যার মূল লক্ষ্য সমাজের ব্যক্তিবর্গের পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ। ইসলামি জীবনবিমা যৌথ চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিপত্তি ও সৃষ্ট ক্ষয়-ক্ষতি কিংবা লোকসান কাটিয়ে উঠার নিমিত্তে বিমায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গ বা কোম্পানি একে অপরকে সহযোগিতা করার জন্য তহবিল গঠন করে থাকে। ইসলামি জীবনবিমা বিশ্বব্যাপী তাকাফুল নামেও পরিচিত।
বস্তুতঃ ইসলামি জীবনবিমা হচ্ছে ব্যক্তি বা পরিবারের কল্যাণার্থে গৃহীত পলিসির নাম, যেখানে পলিসি হোল্ডারগণ ইসলামি শরিয়ার ভিত্তিতে পারস্পরিক সহযোগিতার নিমিত্তে একটি চুক্তিতে উপনীত হন এবং সেই চুক্তির আলোকে পারস্পরিক আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যে ‘তাবাররু’ বা অনুদান প্রদানের মাধ্যমে একটি তহবিল গঠন করেন। এক্ষেত্রে ইসলামি জীবনবিমা কোম্পানি সমন্বয়কারী বা মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। সামগ্রিক লেন-দেনে শরিয়া পরিপন্থি কোন উপাদান থাকবেনা।
ইসলামি জীবনবিমার উৎপত্তি :
ইসলামি জীবনবিমার উৎপত্তি প্রাচীন আরব গোত্রীয় প্রথা ‘আল-আকিলা’ থেকে, এক গোত্রের কোন সদস্য ভিন্ন কোন গোত্রের সদস্যের দ্বারা নিহত হলে, হত্যাকারীর পৈত্রিক আত্মীয়দেরকে নিহতের উত্তরাধিকারীদের ক্ষতিপূরণ (দিয়াত) দিতে হতো। ‘আল-আকিলা’ নামে পরিচিত পৈত্রিক আত্মীয়রা অভিযুক্তের অর্থনৈতিক দায় ভাগাভাগি করে নিত। এই প্রাচীন আরবদেশীয় প্রথা পরবর্তীতে ইসলামি শরিয়া কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
১৯শতকে হানাফি ফিকহ বিশেষজ্ঞ ইবনে আবেদীন ইসলামি বিমার আইনগত ভিত্তি নিয়ে গবেষণা করেন, একপর্যায়ে আইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করে ও বিকল্প হিসেবে একটি মডেল স্থাপন করেন। এরপর ইসলামি স্কলারগণ ইসলামি বিমার পক্ষে রায় দেন ও তার প্রয়োগিক দিক নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা করেন।
বিংশ শতকের প্রারম্ভে ইসলামি আইনবিদ মোহাম্মদ আবদুহ বিমা ব্যবস্থার ইসলামি রূপরেখা প্রদান করেন এবং বিমাকে সম্পূর্ণ আইনসিদ্ধ বলে ঘোষণা দেন। তিনি জীবনবিমাকেও ইসলামি আইন-কানুন অনুসরণ সাপেক্ষে বৈধ বলে ঘোষণা করেন।
বিশ্বব্যাপি ইসলামি জীবনবিমা :
শরিয়া বিরোধী উপাদান ঘারার, মাইসির ও সুদনির্ভর প্রচলিত বিমা ব্যবস্থা মুসলমানদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়, পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর প্রয়োজন পূরণ ও ইসলামে গ্রহণযোগ্য একটি বিকল্প বিমা ব্যবস্থার সন্ধানে ইসলামি আইনবেত্তা ও বিমা বিশেষজ্ঞগণ দীর্ঘদিন ধরে চিন্তা-ভাবনা, গভীর গবেষণা ও পর্যালোচনা করেন, শেষ পর্যন্ত তারা ইসলামি পদ্ধতির বিমা ব্যবস্থা উদ্ভাবনে সমর্থ হন। ইসলামি শরিয়াসম্মত বিমা পরিচালনা প্রসঙ্গে কয়েকটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়, তম্মধ্যে ১৯৬১ সালে দামেস্কে, ১৯৬৫ সালে কায়রোয়, ১৯৭৫ সালে মরক্কো ও লিবিয়ায় এবং ১৯৭৬ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত সম্মেলন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। অবশেষে ১৯৮০ সালে মক্কায় অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে সংস্থাভুক্ত দেশসমূহে ইসলামি বিমা চালু করতে সর্বসম্মত হয়।
১৯৭৯ সালের জানুয়ারিতে সুদানের খার্তুমে ফয়সাল ইসলামি ব্যাংক অব সুদান-এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা হয় বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ইসলামি বিমা কোম্পানি ‘ইসলামি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি’। একই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে বাহরাইনের আল-বাকারা ব্যাংক ১৯৮০ সালে ‘ইসলামি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করে এবং জেনেভাভিত্তিক দারুল মাল ইসলামি গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দি তাকাফুল ইসলামি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি অফ বাহরাইন’।
এরপর ধীরে ধীরে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি বিমা বিস্তৃতি লাভ করে। দূরপ্রাচ্যে মালয়েশিয়া এব্যাপারে এগিয়ে যায়। ইসলামি বিমার প্রসার ও প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘মালয়েশিয়া তাকাফুল এ্যাক্ট, ১৯৮৪’ নামে পৃথক আইন প্রণীত হয়।
মুসলিম দেশগুলোতেই নয়, অমুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, তিউনিশিয়া, সেনেগাল, লুক্সেমবার্গ শ্রীলংকায়ও ইসলামি জীবনবিমা কোম্পানির কার্যক্রম রয়েছে। শুধু তাই নয় The Islamic Insurance Association of London নামে ইসলামি বিমা কোম্পানিগুলোর শক্তিশালী একটি ফোরামও রয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে ইসলামি অর্থনীতির চাহিদা ও চর্চা দিন দিন বেড়েই চলেছে। IFSB-এর ২০২৩ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসলামি ফিন্যান্স সার্ভিসেস ইনস্টিটিউশনসের প্রধান তিনটি বিভাগ ব্যাংক, ক্যাপিটাল মার্কেট ও তাকাফুল-এর মোট সম্পদ প্রায় ৩.২৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ২০২২ শেষে তাকাফুল কনট্রিবিউশনসের পরিমাণ ৩০বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধির হার ১৬.১% যা ২০২১ সালের প্রবৃদ্ধির (৫.৪%) চেয়ে ঢের বেশি, এ কনট্রিবিউশনস বৈশ্বিক ইসলামিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট সম্পদের ০.৯ শতাংশ। বর্তমান বিশ্বের ৪৫টি দেশে তাকাফুল কোম্পানির সংখ্যা উইংসহ মোট ৩৩৫টি।
বাংলাদেশে ইসলামি জীবনবিমার অগ্রগতি ও সম্ভাবনা :
বাংলাদেশেও ইসলামি পদ্ধতির আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়াস দীর্ঘদিনের। ১৯৮৩ সালে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর এর সফলযাত্রা অবিরাম চলতে থাকে। ইসলামি ব্যাংক তার কার্যাবলিকে শরিয়াভিত্তিতে পরিচালনা করতে গিয়ে ইসলামি বিমার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ইসলামি জীবনবিমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠার জন্যে জনমত গঠন ও পরিচিতির উদ্দেশ্যে ইসলামি ব্যাংক ১৯৮৯ সালের অক্টোবরে ঢাকায় আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে।
নব্বই দশকে বাংলাদেশের কতিপয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব প্রচলিত বিমার পরিবর্তে ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী বিমা প্রচলনের বিষয়ে গবেষণা করতে থাকেন। ১-২ মার্চ, ১৯৯৯ সালে অনুষ্ঠিত হয় ডি-৮ সম্মেলন, সম্মেলনে ৮টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান একত্রিত হন। সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় মালয়েশিয়া পুনঃতাকাফুলের সুবিধা ডি-৮-এর সদস্য দেশের জন্য আরো প্রসারিত করবে। প্রেক্ষিতে ডি-৮-এর রাষ্ট্রপ্রধানগণ সিদ্ধান্ত নেন নিজ নিজ দেশে তাকাফুল ও পুনঃতাকাফুল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
ব্যাংক ও বিমা যেহেতু একেঅপরের পরিপূরক সেহেতু ইসলামি বিমাও ইসলামি ব্যাংকের পরিপূরক। প্রেক্ষিতে দেশে ইসলামি বিমা প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে সরকার ইসলামি নামকরণ এবং মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলসে শরিয়া কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে দেশে ইসলামি জীবনবিমা ও সাধারণ বিমা প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করে। ফলশ্রুতিতে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি জীবনবিমা কোম্পানি হিসেবে ২০০০ সালে ফারইস্ট ইসলামি লাইফ কার্যক্রম শুরু করে। ২০০২ সালের অক্টোবরে ইসলামি বিমা কোম্পানিসমূহের জন্য কেন্দ্রীয় শরিয়া কাউন্সিল হিসেবে ‘সেন্ট্রাল শরিয়া কাউন্সিল ফর ইসলামিক ইনসিওরেন্স অব বাংলাদেশ’ যাত্রা শুরু করে।
অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও ইসলামি জীবনবিমা বেশ অগ্রসর। বাংলাদেশে মোট জীবনবিমা কোম্পানির সংখ্যা ৩৬, তম্মধ্যে ২৯টি কোম্পানিই ইসলামি জীবনবিমার সাথে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে পূর্ণাঙ্গ ইসলামি জীবনবিমা কোম্পানির সংখ্যা ১৩টি এবং ১৬টি জীবনবিমা কোম্পানির রয়েছে ইসলামি উইং। প্রায় প্রতিটিতেই কার্যক্রম ইসলামি শরিয়া মোতাবেক পরিচালনার্থে শরিয়া কাউন্সিল রয়েছে। দিন দিন সংখ্যার বিচারে ইসলামি জীবনবিমা শিল্প বাংলাদেশে বেশ অগ্রসর।
বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য ২০১০ সালে প্রণীত বিমা আইনেও রয়েছে ইসলামি জীবনবিমা পরিচালনার সুস্পষ্ট অনুমোদন। ‘ইসলামি বিমা ব্যবসা’ শিরোনামীয় ৭নং ধারায় বলা হয়েছে- ‘এই আইন কার্যকর হইবার পূর্বে Insurance Act, 1938 এর অধীন নিবন্ধিত যেই সকল বিমাকারী ইসলামি বিমা ব্যবসা পরিচালনা করিত, সেই সকল বিমাকারী এবং ইসলামি বিমা ব্যবসা পরিচালনায় আগ্রহী যে কোন ব্যক্তি বা কোম্পানি এই আইনের অন্যান্য বিধান এবং কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে অনুমতিপ্রাপ্তি সাপেক্ষে, যে কোন শ্রেণির বা উপ-শ্রেণির বিমা ব্যবসা পরিচালনা করিতে পারিবে।’
জাতীয় বিমা নীতি ২০১৪-এ ইসলামি জীবনবিমা কার্যক্রম সম্প্রসারণেও নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধান প্রতিপালনীয় বিষয় সমূহের ৩০নং ধারায় বলা হয়েছে, ‘ইসলামি বিমা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শরিয়াভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা হবে।’ এর কর্মকৌশলে রাখা হয়েছে ‘ইসলামি বিমার জন্য প্রয়োজনীয় বিধি ও প্রবিধি প্রণয়ন।’ কার্যাবলীতে রাখা হয়েছে ‘শরিয়াভিত্তিক বিমা কার্যক্রম উৎসাহিত করার উদ্যোগ গ্রহণ।’
ইসলামি জীবনবিমা পরিচালনায় বিধি প্রণয়নে চলছে অব্যাহত কার্যক্রম। ইতিমধ্যে ‘ইসলামি বিমা বিধিমালা, ২০২৪’ শীর্ষক খসড়া প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট অংশীজন/বিশেষজ্ঞ/জনসাধারণের নিকট হতে মতামত নেওয়া হয়েছে। যা এখন সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য অপেক্ষমান।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত ‘বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২০-২০২১, ২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩’ মোতাবেক পূর্ণাঙ্গ ইসলামি জীবনবিমা কোম্পানিগুলোর ক্ষুদ্র ও গোষ্টি বিমাসহ ২০২২ সালে প্রিমিয়াম সংগ্রহের পরিমাণ ২,১২৬.৫৩ কোটি টাকা, যা বছরটিতে সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের ১৮.৬৭ শতাংশ। ২০২১ সালে ছিল ১,৭২৩.৭০ কোটি টাকা, যা সংগৃহীত মোট প্রিমিয়ামের ১৬.৮৫ শতাংশ। এদের ২০২২ সালে প্রিমিয়াম আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩.৩৭ শতাংশ।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬৭ মিলিয়ন তম্মধ্যে মাত্র ১০ মিলিয়ন মানুষের জীবনবিমা পলিসি রয়েছে অর্থাৎ জনসংখ্যার মাত্র ৬%এরও কম মানুষ জীবনবিমার আওতায় এসেছে, জনসংখ্যার ৯৪% এখনও বিমার বাইরে। পাশাপাশি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা, যা বিমা শিল্পের সম্ভাবনাময় দিক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অনুমোদিত জীবনবিমা পলিসি ক্রয়ে ইনকাম ট্যাক্স রিবেট সুবিধা, প্রতিযোগিতামূলকভাবে অধিক লভ্যাংশ প্রাপ্তি এবং ভবিষ্যত সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবেলায় আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবার নিশ্চয়তা অপরদিকে ব্যাংকের আমানতের লভ্যাংশের হার কমে যাওয়ায় দেশের অধিকাংশ শিক্ষিত ও সচেতন জনসাধারণ তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থ সঞ্চয়ের জন্য জীবনবিমার প্রতি ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়ছেন।
বাংলাদেশের মানুষ জীবন ও আর্থিক নিরাপত্তার ব্যাপারে এখন অনেক বেশি সচেতন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আবিস্কৃত ‘কোভিড-১৯’ মহামারী বিশ্বজুড়ে মানবজীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে, বদলে দিয়েছে জীবনযাত্রা। এই রোগের সংক্রমণ ও তার জেরে কোটি মানুষের মৃত্যুতে উদ্বিগ্ন ও অনিশ্চয়তার ভয় মানুষের মনকে করেছে জর্জরিত। মানুষ তাদের জীবন, স্বাস্থ্য ও আর্থিক ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়ে ঝুঁকে পড়ছে আর্থিক নিরাপত্তা তথা জীবনবিমার দিকে।
বিমা শিল্পকে গুরুত্ব প্রদান ও শিল্পের উন্নয়নকল্পে বিমা আইন, ২০১০, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১০ ও বিমা কর্পোরেশন আইন, ২০১৯ প্রণয়ন, জাতীয় বিমা দিবস প্রবর্তন, জাতীয়ভাবে বিমা মেলার আয়োজন, পাঠ্যপুস্তকে বিমা বিষয়ের অন্তর্ভুক্তি, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারি ও তদারকি বৃদ্ধি, বিমা খাতের উন্নয়নে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে Bangladesh Insurance Sector Development Project (BISDP) প্রকল্প চালু, বিদেশগামী শ্রমিকদের জীবনবিমা বাধ্যতামূলক করা, পরীক্ষামূলক স্বাস্থ্যবিমার কর্মসূচী গ্রহণ প্রভৃতির মাধ্যমে গত দশকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বেড়েছে পৃষ্ঠপোষকতা।
প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বিশ্বে বিমা কোম্পানিগুলোতে প্রযুক্তির ব্যবহারও বহুলাংশে বেড়েছে। এতে গ্রাহকসেবার মানও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রাহকগণ স্বল্পসময়ে তার পলিসির তথ্য জানতে পারছেন ফলে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ছে ইসলামি জীবনবিমা শিল্পের উপর।
ইসলামি জীবনবিমা শিল্প দ্রুত বিকশিত হচ্ছে এবং স্থিতিশীল উন্নয়ন পর্বে প্রবেশ করছে। বিশ্বে ইসলামি জীবনবিমা বিধি প্রণয়নের দিক থেকে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে মালয়েশিয়া ও বাহরাইন। বাংলাদেশেও ইসলামি জীবনবিমা বেশ সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে বিশেষ করে তৃতীয় প্রজন্মের ইসলামি জীবনবিমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম আহরণের প্রবৃদ্ধিতে বেশ অগ্রসরমান অবস্থায় রয়েছে। ইসলামিক উইংগুলোতেও ব্যবসার হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসলামি বিমা বিধিমালা গেজেট হলেই ইসলামি জীবনবিমা শিল্পে অভূতপূর্ব জাগরণ সৃষ্টি হবে।
এ বি এম সাইফুল ইসলাম (সচিব, শরিয়া কাউন্সিল, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানি লিমিটেড)