নির্দিষ্ট মার্কেট শপিং মলে বসবে ইএফডি
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৩:৩২ অপরাহ্ন | অর্থ ও বাণিজ্য

ভ্যাট আহরণে প্রথম ধাপে বসানো হয়েছে ১০০টি ইএফডি মেশিন। পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার দুটি ও চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের আওতাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন বসানো হয়েছে। তিন কমিশনারেটের আওতায় দেখে দেখে প্রতিষ্ঠানে ১০০টি মেশিন বসানো হয়েছে। স্থাপন করা মেশিন কমিশনাররা তদারকি করছেন। এরই মধ্যে এ মেশিনের বিষয়ে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া নিচ্ছেন কমিশনাররা। একই শপিং মল বা মার্কেটে একই ক্যাটেগরির কিছু দোকানে মেশিন বসানো হয়েছে। এতে ভ্যাট পরিশোধের ভয়ে ক্রেতারা অন্য দোকানে যাচ্ছেন। ফলে যেসব দোকানে মেশিন বসানো হয়েছে, সেসব ব্যবসায়ী অসন্তোষ প্রকাশ করছেন।
অসন্তোষ দূর ও সব ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। উদ্যোগের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ধাপে বিচ্ছিন্নভাবে ইএফডি বা এসডিসি আর বসাবে না এনবিআর। একটি শপিং মল বা মার্কেট চিহ্নিত করে তাতে সব দোকানে অথবা একই ক্যাটেগরির সব দোকানে মেশিন বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী শপিং মল, মার্কেট বা নির্দিষ্ট সেবার সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিতে এনবিআর থেকে ভ্যাট কমিশনারদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, যাতে সাত দিনের মধ্যে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. জামাল হোসেনের সই করা চিঠিতে বলা হয়, ‘২৫ আগস্ট পাইলট বেসিসে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন ক্যাটেগরির ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ১০০টি ইএফডি স্থাপন ও চালু করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ইএফডি বা এসডিসি স্থাপনে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অনুসৃত পদ্ধতি হবে কোনো একটি শপিং মল বা মার্কেটের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ডিভাইস স্থাপন কিংবা কোনো এলাকার একটি আইটেম বা নির্দিষ্ট সেবার নিবন্ধিত সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে (যেমন উত্তরার সব মিষ্টির দোকান বা বায়তুল মোকাররমের সব জুয়েলারির দোকান) ডিভাইস স্থাপন করা।’
আরও বলা হয়, ‘এরই মধ্যে ১০০টি ডিভাইস বসানো ও চালু করা হয়েছে। এসব ডিভাইস চালুর ১০তম দিন পরিবীক্ষণের পর ১১তম দিনে ডিভাইসগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদন দিতে কমিশনারদের বলা হয়েছে। একইসঙ্গে পরবর্তী ধাপে ইএফডি বা এসডিসি স্থাপনের জন্য কমিশনারদের অধিক্ষেত্রের এক বা একাধিক শপিং মল ও মার্কেট শনাক্ত করে তালিকা সাত দিনের মধ্যে এনবিআরে পাঠাতে বলা হয়েছে।’
এনবিআর সূত্র জানায়, যেসব ব্যবসা কেন্দ্রে ইসিআর ও পিওএস মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো তুলে দিয়ে ইএফডি মেশিন বসানো হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মূলত রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড, মিষ্টান্নভাণ্ডার, আবাসিক হোটেল, কমিউনিটি সেন্টার, অভিজাত শপিং সেন্টারের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পোশাক বিক্রয়কেন্দ্র ও বুটিক শপ, বিউটি পার্লার, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র, আসবাবপত্রের বিক্রয়কেন্দ্র, ডিপার্টমেন্ট স্টোর ও জেনারেল স্টোর, সুপারশপ, বড় ও মাঝারি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্বর্ণ ও রুপার প্রতিষ্ঠান। নতুন এই যন্ত্র প্রতিস্থাপনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নতুন ভ্যাট আইন অনুযায়ী, যেসব ব্যবসায়ীর বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার বেশি, তাদের অবশ্যই এই ইএফডি ব্যবহার করতে হবে।
সূত্রমতে, প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ হাজার মেশিন বসাবে এনবিআর। চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এসজেডজেডটি মেশিন সরবরাহের কাজ পেয়েছে। বাংলাদেশের সিনেসিস আইটি’র সঙ্গে তারা যৌথভাবে কাজ করছে। পর্যায়ক্রমে এক লাখ মেশিন বসানো হবে। ব্যবসায়ীদের বিনা মূল্যে এ মেশিন দেওয়া হচ্ছে। এ মেশিনে টেম্পারিং করার সুযোগ নেই বলে ভ্যাট ফাঁকি রোধ হবে। এনবিআরে সেন্ট্রাল সার্ভার থাকবে। একজন ভোক্তা কেনাকাটার পর চালান চাইবে। ইএফডি মেশিনে ভ্যাট ইনপুট দেওয়ার পর সার্ভার থেকে এনওসি (অনুমতি) ছাড়া চালান বের হবে না। এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. জামাল হোসেন বলেন, ‘পাইলট পর্বে আমরা বিভিন্ন আইটেমের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি স্থাপন করেছি। এতে এক আইটেমের একটি দোকানে ইএফডি বসেছে কিন্তু পাশের দোকানে বসেনি। এতে সমতা থাকেনি। ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। এ জন্য অর্থাৎ সমতা বিধানের জন্য ভবিষ্যতে একটি মার্কেটের সব ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানে ইএফডি বসানো হবে। যাতে কেউ বলতে না পারে যে আমার প্রতিষ্ঠানে ডিভাইস আছে অথচ উনার দোকানে ডিভাইস নেই। অথবা কোনো এলাকা ধরুন গুলশান, এ এলাকায় যত স্বর্ণের দোকান আছে সব দোকানে ডিভাইস বসাবো। তাহলে কারোই হার্টবার্নিং থাকবে না। অর্থাৎ ইএফডি স্থাপনে একটা সমতানীতি অবলম্বন করার জন্যই এটা করা হবে।’