জাবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে র‍্যাগিংয়ের এর প্রতিবাদে মানববন্ধন

 প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২২, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন   |   শিক্ষা

জাবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে র‍্যাগিংয়ের এর প্রতিবাদে মানববন্ধন



মাহমুদুল হাসান (জাবি প্রতিনিধি) : 


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গালি-গালাজ ও নির্যাতনের অভিযোগের  প্রেক্ষিতে মানববন্ধন করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখা। ,হবৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।


মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের  ৪৫ ব্যাচের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মুজিবুর রহমান শিশির তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন তাদের প্রয়োজনে ক্ষমতাসীন ছাত্র রাজনৈতিক দলকে লেলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন যৌক্তিক আন্দোলন বানচাল করে দেয়। আজকে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি সচেতনতার জায়গা থেকে ও অধিকারের জায়গা থেকে। গণরুমে শিক্ষার্থীদের  যে নির্যাতন তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তার সাথে যারা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সকলকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’


সমাপনী বক্তব্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি  আবু সাঈদ বলেন, ‘যারা সন্ত্রাসী ও দুবৃর্ত্ত্বপনা করে যাচ্ছে প্রশাসন তাদের প্রকাশ্যে ও নির্লিপ্তভাবে ছায়া দিয়ে আসছে। যারা র‍্যাগিং করে তারা শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নয় এই দেশেরও শত্রু। বঙ্গবন্ধু হলের ঘটনাটি প্রকাশ্যে এসেছে তবে প্রত্যেকটা হলেই গণরুম ও গেস্টরুমের নামে প্রতি রাতে শিক্ষার্থীদের নিযার্তন-নীপিড়ন করা হচ্ছে।’

  

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে যে জায়গায় এই ধরণের অপ্রীতিকর কাজের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদেরকে যেন খুব দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা হয়। এছাড়া এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যৎ আর কেউ না করে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক।’


এছাড়াও আজ জাবি সংসদ ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক মাহমুদুল হাসান হৃদয় স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 


র‍্যাগিং বন্ধে ব্যর্থতার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশনকেই নিতে হবে 


অবিলম্বে অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত কর


প্রথম বর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সিট নিশ্চিত করার মাধ্যমে গণরুম সংস্কৃতি বিলুপ্ত করতে হবে


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক র‍্যাগিং তথা শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও তা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের উদাসীনতা ও অক্ষমতায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ। র‍্যাগিং বন্ধে প্রশাসনের ঘোষিত 'জিরো টলারেন্স' যেন ফাঁপা বুলি ছাড়া কিছুই না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে 'র‍্যাগিং' দীর্ঘদিনের লালিত অপসংস্কৃতি। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে প্রশাসন আসলেই এই নিপীড়ন বন্ধে আগ্রহী নাকি বিশেষ কোনো সুবিধার জন্য তারা এটির অলিখিত অনুমোদন দিয়ে রেখেছে?


আজ এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ইমতিয়াজ অর্ণব এবং সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তথ্য-প্রমাণসহ র‍্যাগিং-এর বেশ কিছু অভিযোগ সামনে এলেও বরাবরের মতো বেশিরভাগই থেকে যাচ্ছে পক্ষপাতদুষ্টতার আড়ালে। প্রায় ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের ক্ষমতাশীল ছাত্র সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাচর্চায় প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের পরিপূরকতাকে ইঙ্গিত করে।  

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শতভাগ আবাসিকের তকমা থাকলেও মূলত প্রশাসনের নিস্ক্রিয় ভূমিকায় হলে হলে সিট বণ্টনের দায়িত্ব ছাত্রলীগের হওয়ায় সিট পেতে হলে নবীন শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন সহ্য করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। প্রশাসনের চিরায়ত নির্লিপ্ত অবস্থানের কারণে র‍্যাগিং এর ফলে মানসিক ভারসাম্য হারানো, গুরুতরভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি- এসকল কালিমায় বিশ্ববিদ্যালয় আজ কলুষিত। 


গত ১৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় নিন্দা জ্ঞাপন করে ছাত্র ইউনিয়ন, জাবি সংসদের নেতৃবৃন্দ।

 

১৮ অক্টোবর শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনার সাথে জড়িতদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং  এর  সংস্কৃতি বন্ধে আমাদের দাবিসমূহ নিম্নরূপ-

১. এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিকে গেস্টরুমের সিসিটিভি ফুটেজ এবং সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কালক্ষেপণ না করে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। 

২. দ্রুততম সময়ের মধ্যে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। 

৩. নবীন শিক্ষার্থীদের ভর্তির পরই নিজ নিজ সিটের ব্যবস্থা করে গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে । 


উল্লেখ্য, সম্প্রতি  জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গেস্টরুমে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র‍্যাগিংয়ের একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম  ইউটিউব ও ফেসবুকে  ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ সহ কান ধরা এবং দুই হাতে ইট নিয়ে একপায়ে দাড়িয়ে থাকার জন্য বলতে লক্ষ করা যায় । 



শিক্ষা এর আরও খবর: