ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত ও বহিস্কৃত নেতাদের নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে
প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৪ অপরাহ্ন | জেলার খবর

ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ- ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল পদ স্থগিত হওয়া এবং বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করায় দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি তিনি রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ স্থগিত হওয়া নাসিম উদ্দিন আকন ও কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহরসহ একাধিক স্থগিত নেতাকে নিয়ে সভা-সমাবেশ করেছেন। এ ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
কাঠালিয়া উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি জাকির হোসেন জানান, “রাজাপুর ও কাঠালিয়ার বিএনপি এখন দুইভাগে বিভক্ত। কেন্দ্র থেকে বহিষ্কৃত বা স্থগিতদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে নিষেধ থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। মনে হয় রাজাপুর-কাঠালিয়ায় ভিন্ন একটি বিএনপি চলছে।”
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নাসিম উদ্দিন আকন চলতি বছরের ৮জানুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ পান। সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় ২৫জানুয়ারি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার পদ স্থগিত করা হয়।
পরে ২ফেব্রæয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মোতাবেক তার প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
একইভাবে, কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহর আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন ও নির্বাচনী কর্মকান্ডে অংশ নেয়ার অভিযোগে ৫এপ্রিল শোকজ করা হয়। পরদিন সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় তার পদ স্থগিত করা হয় এবং তাকে সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। নাসিম উদ্দিন আকন বলেন,“আমাকে বহিষ্কার করা হয়নি, শুধু পদ স্থগিত করা হয়েছে। জেলা বিএনপির রোষাণলের কারণেই এ সিদ্ধান্ত। রাজাপুরের মানুষ ও নেতাকর্মীরা আমাকে ভালোবাসেন। তাই রাজনৈতিক, পারিবারিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা আমাকে দাওয়াত দেয়। এটা আমার গ্রহণযোগ্যতা। তাই রাজনৈতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে আমি স্বাভাবিকভাবেই অংশ গ্রহণ করি। রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অংশগ্রহণে আমার কোন বাধা নাই।”
বহিস্কৃত নেতা আখতার হোসেন নিজাম মীরবহরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, “বহিষ্কৃতদের সঙ্গে কাজ করা যায় না, তবে যাদের পদ স্থগিত করা হয়েছে তারা মিছিল-সমাবেশে অংশ নিতে পারেন। তাদের পদ না থাকলেও তারা দলের অংশ, তাই সভায় অংশগ্রহণে সমস্যা নেই।”
তিনি আরও বলেন, “যে আওয়ামী লীগ করে, সেও যদি আমার মিছিল-মিটিংয়ে আসে, আমি কি তাকে বের করে দেব? মিছিল-মিটিংয়ে আসা এক জিনিস, কিন্তু পদাধিকার বলে কমিটি বা সংগঠন করা আরেক জিনিস। সাংগঠনিকভাবে যার পদ স্থগিত, সে কমিটিতে থাকতে পারে না। তবে মতবিনিময় সভা বা জনসভায় তার উপস্থিতিতে আমি কোনো সমস্যা দেখি না।”
নাসিম উদ্দিন আকনের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি ব্যাখ্যা দেন, “না ওটা আমাদের অস্থায়ী কার্যালয়। শাহজাহান ওমর দল থেকে যাওয়ার পর ওটা রাজাপুর বিএনপির অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানের ছবি আছে। নতুন অফিস এখনো নেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “নাসিম উদ্দিন আকন একটি স্কুল ও মাদ্রাসার গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি। আমি যদি সেই জায়গায় যাই, তাহলে কি সে থাকবে না? আমার দলের কেউ যদি দল থেকে বহিষ্কারও হয়, কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা শিক্ষক হিসেবে থাকে, তাহলে সে উপস্থিত থাকলে সমস্যা কোথায়?” জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাত হোসেন বলেন, “যারা পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন, এতে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে জানানো হয়েছে।”