লাপাত্তা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

 প্রকাশ: ০৬ অগাস্ট ২০২৪, ১২:৪৮ অপরাহ্ন   |   পুলিশ প্রশাসন

লাপাত্তা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা


শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবরে নিমেষেই চিত্র পাল্টে যায়। নিরাপত্তার সব দায়িত্ব ছেড়ে নিজেদের জীবন নিয়েই সংকটে পড়ে পুলিশ। বিকেল ৩টার পর থেকে শুরু হয় থানায় থানায় দুর্বৃত্তদের হামলা। জীবন বাঁচাতে থানায় অবস্থানরত পুলিশরা যখন অসহায় তখন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের খোঁজ মেলেনি।




সোমবার (৫ আগস্ট) রাত ৮টা থেকে দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত ডিএমপি সদর দপ্তরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কারো সাড়া মেলেনি। কারো ফোন বন্ধ, কারো ফোন নম্বরে কল গেলেও রিসিভ হয়নি। এমন যখন অবস্থা তখনও রাজধানীর রাজারবাগ, বিভিন্ন পুলিশ লাইন্স, পিওএমসহ বিভিন্ন থানা, স্থাপনায় দুর্বৃত্ত কর্তৃক আক্রান্তের খবর আসছিল।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর ৫১টি থানার মধ্যে ৪টি বাদে সব থানাই কম-বেশি আক্রান্ত হয়েছে। দুর্বৃত্তদের হামলা ঠেকাতে ও নিজেরা জীবন বাঁচাতে থানায় অবস্থান করা পুলিশ সদস্যরা ছুড়েছেন নির্বিচারে গুলি। এতে হতাহত বেড়েছে।




ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, বিকেল থেকে একের পর এক ম্যাসেজ আসতে থাকে ডিএমপি সদর দপ্তরে। কিন্তু কোনো থানাতেই নিরাপত্তা দিতে পারেনি পুলিশ। অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তার মোবাইল খোলা পাওয়া গেলেও কারো সাড়া মেলেনি। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সদস্যরা।


সোমবার রাতে বংশাল থানার এক পুলিশ সদস্য জানান, আমরা চরম আতঙ্কে আছি। থানায় থানায় দুর্বৃত্তদের হামলা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য নিরাপদ স্থানান্তর কিংবা সেনা মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে বারবার ম্যাসেজ পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতনদের। সাড়া পাইনি। নিজেরা বাঁচতে প্রথমে ফাঁকা গুলিও ছুড়েছি। রাতে কি হবে জানি না। থানায় আক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে।



খোদ রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানে পুলিশ সদর দপ্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসময় দুটি ভবনে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। চালানো হয় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে এসব হামলার ঘটনা ঘটে।


সদর দপ্তরের ভেতরে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা  জানান, পুলিশ সদর দপ্তরে আগুন দেওয়া হয়েছে। দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা জীবন বাঁচাতে দেয়াল টপকে পালাচ্ছেন। এসময় তিনি সেনাবাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন।


তবে এই মুহূর্তে পুলিশ দপ্তরে আইজিপি আব্দুল্লাহ আল-মামুন উপস্থিত নেই বলে জানা গেছে।


পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যাপক লুটপাট চলেছে ও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে। পুলিশ সদর দপ্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ও অবস্থান নেওয়া সদস্যদের অনেকে দেয়াল টপকে কেউ পোশাক পরিবর্তন করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। আগুন দেওয়া হয় অনেক গাড়িতে।


থানা পুলিশ ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার আক্রান্ত হওয়ায় পুলিশের নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছে। ফলে নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র থেকে এসব তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়নি।


রাত ১টার পর মতিঝিল, বংশাল, পল্টন, খিলগাঁও থানায় আগুন দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। রাজধানীর আদাবর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ি, উত্তরা, চাঁনখারপুল, সাভার থানা পুলিশের অন্তত অর্ধশত পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন দুর্বৃত্তদের হামলায়। তবে সূত্রগুলোর দাবি রাজধানীতে নিহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থান থেকে নিহতের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। সোশ্যাল মিডিয়া, পুলিশের বিভিন্ন পর্যায় থেকে নিহত অনেক পুলিশ সদস্যের ছবি প্রকাশ পেয়েছে।


ডিএমপি সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এক সদস্য জানান, সবাই দৌড়ের ওপর। পরিস্থিতি খুব খারাপ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি সম্পর্কে সব জানেন কিন্তু কোনো দায়িত্ব বা নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নিতে পারছেন না, তারা নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায়।


যাত্রাবাড়ি থানার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, থানা থেকে কল আসছে, গুলির শব্দ শুনছি। হামলা, চিৎকারের শব্দ পাচ্ছি অসহায় লাগছে, কিছুই করা যাচ্ছে না। হয়ত কাল শুনবেন আমিও নেই মরে গেছি। মরদেহ শ্মশানে নাকি কবরস্থানে যাবে সেটারও নিশ্চয়তা আর নাই। এমন পরিস্থিতি হবে ভাবিনি।


প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে ঢাকায় হাজারো ছাত্রজনতার ঢল নামে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। দুপুরে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। খবরে সারা দেশে আনন্দ উল্লাসে মাতেন সাধারণ জনসাধারণ।


এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় থানা ও সরকারি অফিস ভবনে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যায়।



পুলিশ প্রশাসন এর আরও খবর: