নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল পদক প্রদান ও ১২৬তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন

 প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৫, ১১:১১ পূর্বাহ্ন   |   শিক্ষা

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নজরুল পদক প্রদান ও ১২৬তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে নজরুল গবেষণা এবং নজরুল সংগীতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এবছর দুই গুণী ব্যক্তিকে দেওয়া হয়েছে ‘নজরুল পদক’। পদকপ্রাপ্তরা হলেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক প্রফেসর ড. রশিদুন্ নবী এবং নজরুল সংগীতশিল্পী মো. ইয়াকুব আলী খান। সোমবার (২৬ মে) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গাহি সাম্যের গান’ মুক্ত মঞ্চে “মোরা বন্ধন-হীন জন্ম-স্বাধীন, চিত্ত মুক্ত শতদল” স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত হয় দুই দিনব্যাপী ‘১২৬তম নজরুল জয়ন্তী-২০২৫’ উদযাপনের দ্বিতীয় দিনের আলোচনা সভা ও পদক প্রদান অনুষ্ঠান।নজরুল গবেষণায় অবদানের জন্য প্রফেসর ড. রশিদুন্ নবী এবং নজরুল সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য মো. ইয়াকুব আলী খানের হাতে পদক ও সনদ তুলে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমদ খান এবং নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সি. আর. আবরার। তিনি বলেন, “অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জালেমের বিরুদ্ধে, ন্যায় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নজরুলের কবিতা-গান আমাদের তরুণ প্রজন্মকে প্রেরণা জুগিয়েছে। নজরুলকে স্মরণ করে তাঁর প্রতি জাতীয় ঋণের সামান্য প্রতিদান দিতেই এই আয়োজন।”তিনি আরও বলেন, “আমরা একটি অস্থির সময় পেরিয়ে এসেছি এবং একইসঙ্গে নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। জাতি হিসেবে অপশক্তিকে পরাজিত করেছি। এখন সময় এসেছে সংস্কারের। এই কাজ শুধু সরকারের একার নয়, আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসেই বাস্তবায়িত হতে হবে।”


বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখনও অস্থিরতা বিরাজ করছে। লেখাপড়া ও পরীক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, “নজরুল এমন একজন কালজয়ী কবি, যাঁর সাহিত্যকর্ম আজও প্রাসঙ্গিক। সাম্প্রদায়িকতা, অসাম্য, দলাদলি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাহস আমরা তাঁর রচনায় পাই। প্রেম ও বিদ্রোহের যে মেলবন্ধন তিনি রচনা করেছেন, তা এই দেশেই সৃষ্টি হয়েছিল।”তিনি আরও বলেন, “বাংলা সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় নজরুলের বিচরণ রয়েছে। তাঁর অবদান আমাদের সমাজ-সংস্কৃতিতে সুগভীর। নজরুলের দর্শন ধারণ করেই আমরা ১৯৭১ পেয়েছি, এবং একইভাবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনেও তরুণদের সাহসী ভূমিকা ছিল নজরুল-প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ।”অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমদ খান, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী এবং সিন্ডিকেট সদস্য এম জাকির হোসেন খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নজরুল পদক প্রদান উপ-কমিটি ২০২৫ এর সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. মো. হাবিব-উল-মাওলা (মাওলা প্রিন্স)।অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর, বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।দিনব্যাপী নজরুল জয়ন্তীর নানা আয়োজনের অংশ হিসেবে সকালে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক নজরুল বক্তৃতামালা-২০২৫। এতে বাংলাদেশ ও ভারতের গবেষক-শিক্ষকগণ চারটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এছাড়াও সন্ধ্যা সাতটায় ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, যেখানে পরিবেশিত হয় আবৃত্তি, নৃত্য, সংগীত ও নাটক ‘জিনের বাদশা’।

এই আয়োজনে জাতীয় কবিকে স্মরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় তুলে ধরেছে নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ ও সাম্যের অগ্রদূতের ভাবনাকে — যা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।


শিক্ষা এর আরও খবর: