খাগড়াছড়িতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী জাহাঙ্গীর এর একচ্ছত্র আধিপত্য
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ০৯:০০ অপরাহ্ন | আইন-আদালত-অপরাধ
স্টাফ রিপোর্টার : জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, খাগড়াছড়িতে কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী মো: জাহাঙ্গীর আলম এর বিরুদ্ধে শিক্ষক/কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার’সহ একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর সিন্ডিকেটে রয়েছেন রাজনৈতিক ছত্রছায়ার ব্যক্তি ও শিক্ষক নেতা। জাহাঙ্গীর এর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা থেকে ২০০০ সালের দিকে কম্পিউটার অপারেটর পদে প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত মো: জাহাঙ্গীর আলম-কে প্রথম পোষ্টিং দেয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, খাগড়াছড়িতে। এরপর তিনি ২০০৫সালের দিকে রাজস্ব খাতের অর্ন্তভুক্ত হন। এসময় তিনি সরকারী কোষাগার হতে প্রাপ্ত বেতন ভাতা দিয়ে নিকটি আত্মীয়-স্বজন নিয়ে চলতে হিমশিম খেতেন।
পরবর্তীতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলী বাণিজ্যের সংস্পর্শে এসে তার ভাগ্যের দুয়ার খুলে যায় এরপর তার আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এক পর্যায়ে এসে তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, খাগড়াছড়িতে তার একক আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হন। ধীরে ধীরে গড়ে তুলেন সম্পদের পাহাড়। অনুসন্ধানে জানা যায়, নিজের নিকট আত্মীয় স্বজনদেরকে নোয়াখালী থেকে খাগড়াছড়ি এনে তথ্য গোপন করে চাকুরী দেন। এরমধ্যে তাঁর ছোট বোন জান্নাতুল ফেরদৌস মিলিকে ২০০৬ সালের দিকে খাগড়াছড়ি জেলার ভুয়া স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পানছড়ি উপজেলাধীন মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরী দেন। যদিও তিনি বা তাঁর পরিবারের সদস্য কেউ খাগড়াছড়ি জেলার বাসিন্দা নয়। খাগড়াছড়ি জেলায় তখন তাদের কোন জায়গা-জমি ছিলনা। পরবর্তীতে এ বিষয়ে গুঞ্জন শুরু হলে একপর্যায়ে ছোট বোনকে এ জেলা হতে লক্ষীপুর জেলায় বদলী করে নিজ এলাকায় নিয়ে যান। এরপর মো: জাহাঙ্গীর আলম বিয়ে করে নিজ স্ত্রী উম্মে আকলিমা বেগম সুইটি-কে একইভাবে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাংগার ভুয়া স্থায়ী বাসিন্দা দেখিয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী দেন ২০১৬ সালের দিকে। তখনও তাদের মাটিরাংগায় কোন জায়গা-জমি ছিলনা। এরপরও প্রভাব খাটিয়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাধীন গঞ্জপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পোষ্টিং নেন।
অনুসন্ধান আরও জানা যায়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম মো: জাহাঙ্গীর আলম তাঁর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একক ভাবে সম্পন্ন করেন। অন্য কোনো কর্মচারীকে কাজের কোনো সুযোগ দেন না তিনি। অফিসে তিনি নিয়োগ,বদলী ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা সবকাজ এককভাবে করে থাকেন। ডিপিইও/এডিপিইও-কে কোন পাত্তা দেন না। কোন কর্মকর্তা কথা না শুনলে, রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে হুমকি-ধমকি দিয়ে কাজ করে থাকেন। তাছাড়া এ অফিসে যে কোনো কাজ তার নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আসতে হয়; এবং ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন। তাঁর সিন্ডিকেটের বাহিরে কেই আসলে তার সাথে র্দুব্যবহার করেন মো: জাহাঙ্গীর আলম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, মো: জাহাঙ্গীর আলম ও তার সিন্ডিকেটের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ট। তিনি আরও বলেন, নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একক আদিপত্য বিস্তার করে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসটাকে জিম্মি করে রেখেছেন মো: জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর ভয়ে কোনো কর্মচারী মুখ খুলতে সাহস পায় না।
তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী জাহাঙ্গীর খাগড়াছড়ি সদর উপজেলাধীন আরামবাগ এলাকায় সুবিশাল ৪তলা ভবন নির্মাণ করেন। একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়ে কিভাবে এতবড় ভবন নির্মাণ করেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- আমি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এ ভবন নির্মাণ করি। যদিও তার ঋণের সাথে ভবণের অর্থ ব্যয়ের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন জায়গার ব্যবসার কাজে তাঁর বর্তমানে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে মর্মেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও খাগড়াছড়ি সদরে বিভিন্ন জায়গায় ও মাটিরাঙ্গাতে তার নামে এবং বে-নামে অনেক সম্পদ রয়েছে।