জুলাই সনদ যেন প্রতারণার বস্তুতে পরিণত না হয়: আখতার
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৪১ অপরাহ্ন | রাজনীতি
জুলাই সনদ যেন কোনো দলের চাপে পড়ে প্রতারণার বস্তু না হয়, সে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন। শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান।আখতার বলেন, কমিশন আমাদেরকে জানিয়েছে যে, তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের একটি আদেশ প্রস্তুত করছেন। যেটাকে আমরা একটা অগ্রগতি হিসেবে দেখি। সেই আদেশের মধ্যকার বক্তব্য কী, সে বিষয়গুলো তারা আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত উপস্থাপন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। যেটা আমাদেরকে এখন পর্যন্ত আশাবাদী হতে দেয়নি। এনসিপির এই সদস্য বলেন, কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ব্যাপারে যে আন্তরিকতার জায়গা থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ প্রস্তুত করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে, সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সেটাও যেন কোনোভাবে জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো করে কোনো দলের চাপে পড়ে একটা কাগুজে দলিল হিসেবে জাতির কাছে বাস্তবায়ন পরিপন্থিভাবে উপস্থাপিত না হয়, সে ব্যাপারে আমরা ঐকমত্য কমিশনকে সর্বাধিক খেয়াল রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। শাপলা প্রতীকেই নির্বাচন করতে চান জানিয়ে আখতার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে যেকোনো দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জোট হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি কমিশন যে ড্রাফট প্রস্তুত করছে, সেটা আমাদের সঙ্গে তারা শেয়ার করবেন। আমরা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়ে তারপর জুলাই সনদে স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হতে পারি। আমরা মনে করি, এই গোটা ঐকমত্য প্রক্রিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি দৃঢ়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আমরাই সংস্কারের আলোচনাকে বাংলাদেশের মেইন স্ট্রিম জায়গায় রাখার জন্য আমাদের দল থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, জুলাই সনদ যেন একটা আইনি ভিত্তি পরিপূর্ণভাবে লাভ করতে পারে, সে কারণে আমরা দীর্ঘসময় ধরে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত না জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির জায়গা নিশ্চিত না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই চেষ্টা চালিয়ে যাব।
বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, আমরা আমাদের দাবিগুলো কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছি। যে আদেশ জারি করা হবে সেই ড্রাফট যেন কমিশন প্রস্তুত করে। এটা যেন আমাদের সঙ্গে শেয়ার করে। এটা জুলাই ঘোষণাপত্রের মতো করে একপাক্ষিক দলীয় কোনো ড্রাফট হিসেবে জারি হওয়ার মতো সম্ভাবনার জায়গায় যেন না থাকে। যাতে করে জুলাই সনদ কোনো প্রতারণায় পরিণত না হয়।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে খেয়াল করেছি যে, অনেক রাজনৈতিক দল এই জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেও তারা মূলত দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। একটি দল জুলাই সনদের স্বাক্ষর মুছে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে। আরেকটি দল জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে ভেস্তে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে। এ অবস্থায় জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি মনে করে, জুলাই সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নই কেবল এই সংকট থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে পারে।
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, আমরা কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ প্রস্তুত করছেন, যেটাকে আমরা একটা অগ্রগতি হিসেবে দেখি। কিন্তু সেই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, সেখানকার টেক্সট, সেখানকার কনটেন্ট এবং তার কার্যকারিতার জায়গাগুলো কী হবে? সেটা এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পরিষ্কারভাবে তারা উপস্থাপন করেননি। আমরা আমাদের দাবিগুলো তাদের কাছে উপস্থাপন করেছি। তারা সেই দাবিগুলো নিজেদের মতো করে আলোচনা করবেন এবং সরকারের সঙ্গে সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।
জানা যায়, এদিন সকাল সোয়া ১০টার পর জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জুলাই সনদ ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে বসে এনসিপি।
বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন, যুগ্ম সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।
অন্যদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
