শিক্ষাথী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে
প্রকাশ: ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন | মতামত

বর্তমান তরুণ প্রজন্মেদের বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের কাঁধেই ভবিষ্যতের সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতার ভার। কিন্তু আমাদের সমাজে এই তরুণরাই আজ দিশাহারা, হতাশ এবং অনেক সময় জীবনের প্রতি অনীহা নিয়ে আত্মহননের মতো ভয়ংকর পথ বেছে নিচ্ছে। পড়াশোনার দীর্ঘ ধাপ অতিক্রম করে যখন কোনো তরুণ কর্মসংস্থানের সুনির্দিষ্ট নিশ্চয়তা খুঁজে পায় না, তখন সে একটি গভীর মানসিক সংকটে নিপতিত হয়। এই সংকট শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং এটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার একটি বহিঃপ্রকাশ।
নম্বরভিত্তিক পড়াশোনার যাঁতাকলে পিষ্ট তরুণেরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো সৃজনশীলতা ও দক্ষতা গড়ে তোলার পরিবর্তে পরীক্ষার নম্বর অর্জনে সীমাবদ্ধ। শিক্ষার্থীরা শেখে না—তারা মুখস্থ করে, তারা প্রশ্নের উত্তর দেয় কিন্তু জীবনের প্রশ্নের উত্তর জানে না। এই ব্যবস্থায় একটি কৃতকার্য সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, কিন্তু বাস্তব জীবনের জন্য যে প্রয়োজনীয় মানসিক দৃঢ়তা, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, কিংবা আত্মবিশ্বাস—সেগুলো তৈরি হয় না। দুঃখজনকভাবে, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় স্কিল ডেভেলপমেন্ট বা সৃজনশীল চর্চার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। প্রোগ্রামিং, শিল্পচর্চা, সাহিত্য, বক্তৃতা, বা উদ্যোক্তা-চিন্তা—এসব দক্ষতার চর্চা করার পরিবর্তে শিক্ষার্থীরা দিনশেষে প্রাইভেট, কোচিং ও গাইড বই নির্ভর পড়াশোনার মধ্যেই আটকে যায়। যে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বেশি নম্বর পায়, তাকেই আমরা ‘সেরা” বলে মূল্যায়ন করি। এর ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী যারা অন্য ক্ষেত্রগুলোতে প্রতিভাবান, তারা নিজেকে ‘ব্যর্থ’ ভাবতে শেখে।
বর্তমান সমাজে শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো মাধ্যমিক পরবর্তী শ্রেণি বিভাজন — বিজ্ঞান, ব্যবসা (কমার্স), ও মানবিক (আর্টস)। এই শাখাগুলোর মধ্যে একটি নির্বাচন যেন শুধু একাডেমিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং সমাজে একজন শিক্ষার্থীর ‘মর্যাদা’ নির্ধারণের মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অভিভাবক ও কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকা যেভাবে নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন, তা উদ্বেগজনক এবং অযাচিত।
বিজ্ঞান ও কর্মাস শাখাকে দীর্ঘদিন ধরে ‘সেরা’ ধরা হয়। একে যেন উচ্চমেধার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, যেখানে আর্টস বা মানবিক শাখাকে অনেক ক্ষেত্রেই অবহেলা করা হয় —‘পড়া পারেনি বলেই আর্টসে গেছে’ এমন মন্তব্য কানে পড়ে হরহামেশা। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের মানসিক বিভ্রান্তি তৈরি হয়। অনেক সময় নিজের ইচ্ছা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও সমাজ বা পরিবারের চাপে পড়ে বিজ্ঞান বা কমার্সে ভর্তি হতে হয়। ফলস্বরূপ, অনেকের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব, হতাশা ও পড়াশোনায় অনাগ্রহ জন্মায়। এই অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ ছাত্রজীবনে নয়, বরং পরবর্তীতে কর্মজীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
শিক্ষকদের ভূমিকাও এখানে প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক শিক্ষক নিজ নিজ বিভাগের প্রচার করতে গিয়ে অন্য বিভাগের অবমূল্যায়ন করেন। তারা যদি বরং শিক্ষার্থীদের প্রতিভা, আগ্রহ ও মনোবিজ্ঞান বুঝে পরামর্শ দেন, তবে ছাত্রছাত্রীরা আরও সুস্থ ও আত্মবিশ্বাসী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
একটি গণতান্ত্রিক ও মানবিক শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতিটি শাখাকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। আর্টস মানেই শুধুমাত্র ইতিহাস-ভূগোল নয়; এখানে সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ভাষা, সংস্কৃতি— এমন বহু ক্ষেত্র আছে যেখানে একজন মানুষ অসাধারণ অবদান রাখতে পারেন। একইভাবে কমার্স ও বিজ্ঞানও গুরুত্বপূর্ণ — তবে কারও পছন্দ বা যোগ্যতাকে নিচু করে দেখা একধরনের সামাজিক বৈষম্যই।
একদিকে যেমন শিক্ষাথীরা নম্বরভিত্তিক পড়াশোনার যাঁতাকলে পিষ্ট, অন্যদিকে বেকারত্বও যেনো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা একটি পুঞ্জীভূত সামাজিক ব্যর্থতা।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসা একজন তরুণ যদি বছরের পর বছর চাকরির পরীক্ষায় বসেও কোথাও ঠাঁই না পান, তখন তার
(লেখক: রাকিবুল ইসলাম সজিব, শিক্ষার্থী, অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, চায়না থ্রী গর্জেস বিশ্ববিদ্যালয়, চীন।)