৫ আগস্টের পর টিউশনি ছেড়ে সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজিতে দুই ভাই
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৫, ০২:২১ অপরাহ্ন | রাজনীতি

টিউশন করে পড়া লেখার খরচ চালাতেন সাকাদাউন সিয়াম এবং ছোট ভাই সাদমান সাদাব। কয়েক মাস হলো টিউশন ছেড়ে দিয়েছেন তারা। এরপর হঠাৎ এক দিন এলাকায় খবর এলো রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক এক সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন দুজনই। এ ঘটনায় বিস্মিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাকাদাউন সিয়াম এবং সাদমান সাদাব—দুজনই রাজধানীর প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। নাটোরের গোপালপুরে তাদের আদি বাড়ি। তবে তারা বর্তমানে রাজশাহীর বাসিন্দা। তাদের বাবা এসএম কবিরুজ্জামান পেশায় এক গ্যাস ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী।
মূলত গত শনিবার (২৬ জুলাই) রাত ৮টার দিকে আওয়ামী লীগ নেত্রী (কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষিত) ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজি করার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে এই আপন দুই ভাইও রয়েছে।
ওই সময় পুলিশ জানায়, তারা সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজির চেষ্টা করছিলেন।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, তারা শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে আগে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। এর আগে ১০ লাখ টাকাও নিয়েছিলেন। শনিবার তারা বাকি টাকা চাইতে ওই বাসায় গিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে পুলিশকে খবর দিলে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি।
চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দুই ছেলের গ্রেপ্তারের খবরে আক্ষেপ করেছেন তাদের বাবা এসএম কবিরুজ্জামান। তিনি বলছেন, এটা মেনে নেওয়া তার জন্য কঠিন।
এসএম কবিরুজ্জামানের আদি বাড়ি নাটোরের গোপালপুরে হলেও ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেনার দায়ে বাড়ি বিক্রি করে এক দশক আগে রাজশাহীতে চলে আসেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে কেচুয়াতৈল এলাকায় মেসার্স এন বি ফিলিং অ্যান্ড সিএনজি স্টেশনের পাশের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই শিক্ষার্থীর বাবা কবিরুজ্জামান ফিলিং স্টেশনে স্বল্প বেতনে চাকরি করছেন। ওই বেতনের বেশিরভাগ টাকা বাসা ভাড়া দিতেই ফুরিয়ে যায়। আগে দুই ভাই টিউশন করে খরচ চালাতেন। তবে কয়েক মাস হলো টিউশন ছেড়ে দিয়েছেন। রাজশাহীতে কবির উদ্দিনের নিজস্ব কোনো জমি নেই। দুই ছেলের গ্রেপ্তারের খবরে স্থানীয় লোকজনও বিস্মিত।
সরেজমিনে ওই ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, গাড়িতে গ্যাস ভরছেন কবিরুজ্জামান। কাজ করতে করতে তিনি বলেন, ‘ফিলিং স্টেশনে কাজ করে আয় খুবই কম। যা পান তা দিয়ে বাসা ভাড়া দিতেই চলে যায়। ছেলেদের পড়াশোনায় মাসে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ লাগে। তাকে কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে, সেটি দিয়ে চলেন তিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই ছেলে আগে টিউশন করত। কিছুদিন হলো রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। রোববার সকালে জানলাম, দুই ছেলে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। ওদের জীবনধারা আলাদা। দাঁড়ি রাখে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়াবে, এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন।’
এদিকে চাঁদাবাজির ঘটনায় পাঁচজনের মধ্যে সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাবসহ চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
তারা দুই ভাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তারের পর সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
অন্য দুইজন হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না ও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান ওরফে রিয়াদ। তাদেরও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান আবদুর রাজ্জাকের ঘনিষ্ঠ। ফেসবুকেও রাজ্জাকের সঙ্গে তাদের চলাফেরার একাধিক ছবি রয়েছে।
সিয়াম ও সাদাব রাজশাহীর খড়খড়ি উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী মহানগর সমন্বয় কমিটির প্রধান মোবাশ্বের আলী বলেন, ‘এরা তো আমাদের স্কুলেরই ছাত্র ছিল। খুব ভালো ছেলে। ওরা গ্রেপ্তার হয়েছে, এটা শুনে আমি হতবাক।’