রাজনৈতিক কৌশলের নামে পুরো জুলাইকে জামায়াতের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে: তাজনুভা জাবীন
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৭ অপরাহ্ন | রাজনীতি
নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে নাটকীয় মোড় নিল নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমঝোতা এবং দলের শীর্ষ নেতাদের ‘মাইনাস পলিটিকস’-এর অভিযোগ তুলে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনুভা জাবীন।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) এক দীর্ঘ ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি দল ছাড়ার পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
তাজনুভা জাবীন তার পোস্টে অভিযোগ করেন, জামায়াতের সঙ্গে এই জোট কোনো আকস্মিক রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তিনি লিখেছেন, ‘পুরো জুলাইকে নিয়ে রাজনৈতিক কৌশলের নাম করে তুলে দিচ্ছে জামায়াতের হাতে।’
তার দাবি, এনসিপির স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে প্রথম নির্বাচনেই কেন জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল হতে হলো, তা নিয়ে দলে কোনো জবাবদিহি নেই। তিনি আরও বলেন, যেখানে এনসিপিকে জামায়াতের ‘বি টিম’ বা ‘অন্য দোকান’ বলা হয়, সেখানে আগে নিজের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা না করে কেন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জামায়াতকে বেছে নেওয়া হলো, তা প্রশ্নবিদ্ধ।
তাজনূভা জাবীন বলেন, মাত্র কিছুদিন আগে সমারোহে সারাদেশ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহের ডাক দিয়ে ১২৫ জনকে মনোনয়ন দিয়ে ৩০ জনের জন্য সীট সমঝোতা করে বাকিদের নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। এই সিদ্ধান্তে সীল মোহর বসানো হয়েছে। বিষয়টা ঠেলতে ঠেলতে একদম শেষ অবধি এনেছে যাতে কেউ স্বতন্ত্র নির্বাচনও করতে না পারে। আগামীকাল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। আমার অবশ্য এই মুহূর্তে স্বতন্ত্র নির্বাচন করার ইচ্ছা নাই। পুরো আগোছালো করে চোখের পলকে ডিসওউন করে দিয়েছে।’
দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এক শীর্ষ নেতা আরেক শীর্ষ নেতার সাথে যে মাইনাসের রাজনীতি করে ওখানে, সেটা ভয়ংকর। এরা নিজেদের মধ্যে রাজনীতি করতে এত ব্যস্ত যে এরা কখনো দেশের জন্য নতুন কোনো রাজনীতি করতে পারবে না।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, এনসিপির নেতারা জুলাইয়ের স্পিরিটকে চর্চা করেন না, বরং নিজেদের ফায়দাতে ‘ব্যবহার’ করেন। যারা দলের নীতিকথা বলেন, তাদের ‘আবেগি’ তকমা দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হয়।
তাজনূভা জানিয়েছেন, তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবেন না। কারণ, সেটির কোনো পরিবেশ রাখা হয়নি। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সংগৃহীত মানুষের অনুদান (ডোনেশন) তিনি একে একে সবাইকে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘নিজেরও ভালো লাগছে না এভাবে ছেড়ে যেতে। কিন্তু এই দল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আমার সামনে আর কোনো সম্মানজনক অপশন নাই।’
যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারার পর তাজনুভা জাবীনের এই পদত্যাগ এনসিপির ‘মধ্যপন্থা’ ও ‘নতুন বন্দোবস্ত’-এর রাজনীতিকে বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলল। বিশেষ করে গণ-অভ্যুত্থান থেকে জন্ম নেওয়া একটি দল কেন প্রথম ভোটেই পুরোনো মেরুকরণে আটকা পড়ল, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।
