যাত্রীবাহী বাসেও ঢুকে পড়ছে স্বশস্ত্র ডাকাত দল
প্রকাশ: ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:২৩ অপরাহ্ন | জনদুর্ভোগ

রাজধানীতে প্রকাশ্যে অস্ত্র ঠেকিয়ে কিংবা ফ্লাইওভারে কুপিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে। যাত্রীবাহী বাসেও ঢুকে পড়ছে স্বশস্ত্র ডাকাত দল। শুধু ছিনতাই-ডাকাতি নয়, পকেটমার ও মলমপার্টির দৌরাত্ম্য আছে এই ফ্লাইওভারে। সম্প্রতি রাজধানীর উত্তরায় একদিনে তিনটি যাত্রীবাহী বাসে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। উত্তরা-টঙ্গীগামী ফ্লাইওভারে নিয়মিত পকেটমার ও মলম পার্টির শিকারও হচ্ছেন যাত্রীরা। পুলিশের দাবি, ফ্লাইওভারকেন্দ্রিক অপরাধ ঠেকাতে সাদা পোশাকেও কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টার দিকে উত্তরার হাউজবিল্ডিং এলাকা থেকে ভিক্টর ক্লাসিক বাসে করে এয়ারপোর্টে যাচ্ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী। কিছুদূর যেতেই ৫ থেকে ৬ তরুণ ওঠে বাসে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৫ থেকে ৬ যাত্রীর মোবাইল-মানিব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যান তারা। আমি বাসে উঠার দুই মিনিট পরেই ৫ থেকে ৬ জন ছেলে সাধারণ যাত্রীর মতোই বাসে উঠে যায়। হঠাৎ করে একজন ছুরি বের করে চিৎকার দিয়ে বলে, যা কিছু আছে বের কর। ৫ থেকে ৬ জনের ওয়ালেট নিয়ে চলে গেল।
এর আধা ঘণ্টা পর টঙ্গী থেকে ফ্লাইওভারের একই পরিবহনের বাসে আবদুল্লাহপুরে ঘটে একই ঘটনা। অস্ত্রের মুখে কয়েকজনের মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা। ভুক্তভোগী এক শিক্ষক জানান, এক পর্যায়ে যাত্রীরা এক হয়ে প্রতিরোধ করলে বাস থেকে নেমে পালিয়ে যান তারা। ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, ডাকাতরা সব জানালা আটকাতে বলে। আমার হাতে ৪০ হাজার টাকা মূল্যের একটি মোবাইল ছিল। এটি আমি দিতে না চাইলে চাকু বের করে। পরে মোবাইল ছেড়ে দিই। ওই শিক্ষকের দেয়া বাসের নম্বরের সূত্র ধরে রামপুরায় বাসটির সন্ধান পাওয়া যায়। চালক জানিয়েছেন, ডাকাতির ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। যাত্রীদের অভিযোগ, উত্তরা-টঙ্গীগামী ফ্লাইওভারে এমন ঘটনা নিয়মিত। ছিনতাই ডাকাতিতে অতিষ্ঠ তারা। গত মাসেই এখানে প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ছিনতাইকারীর পা ধরেও রক্ষা মেলেনি। শুধু ছিনতাই ডাকাতি নয়, পকেটমার ও মলমপার্টির দৌরাত্ম্য আছে এই ফ্লাইওভারে। তবে বেশির ভাগ ঘটনায় মামলা হয়নি উত্তরা পূর্ব থানায়। ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নেয়া হয়েছে মোবাইল হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি)। পুলিশ বলছে, ভিন্ন কথা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম আহমেদ বলেন, বিভিন্ন জেলার লোকজন আসেন। তারা অপরাধ করে দ্রুত চলে যান। প্রতিটি এলাকায় অভিযান চালাচ্ছি। দ্রুত অপরাধ নির্মূলের চেষ্টা করছি। ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় আনার পরামর্শ বিশ্লেষকদের। অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফ্লাইওভারের এন্ট্রি-এক্সিট পয়েন্টগুলোতে নজরদারি বাড়িয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে হবে। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, ‘এই জায়গাতে যখন একটা ব্যত্যয় থাকে, তাই সেই ঘাটতির সুযোগ নিয়ে অপরধী চক্র নানাভাবে সক্রিয় হয়ে একেকজনের কাছ থেকে মূল্যবান জিনিস বা উপকরণ চুরি, ছিনতাই, অথবা ডাকাতি করে নিয়ে যাচ্ছে। এন্ট্রি-এক্সিট পয়েন্টগুলোতে নজরদারি বাড়িয়ে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।’