মধ্যপ্রাচ্যেই আটকা শ্রমবাজার
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:০০ অপরাহ্ন | অর্থ ও বাণিজ্য

বাংলাদেশের রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের বড় অংশই মধ্যপ্রাচ্যনির্ভর। সেখানে লাখো কর্মী কাজ করছেন নির্মাণ, গৃহস্থালি ও সেবা খাতে। তার বিপরীতে ইউরোপের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের উপস্থিতি খুবই সামান্য। ইউরোপের দেশগুলোর কঠোর অভিবাসন নীতি, দক্ষতার ঘাটতি এবং ভাষাগত দুর্বলতা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিবেশী অনেক দেশ দক্ষ জনবল রপ্তানির মাধ্যমে ইউরোপের শ্রমবাজারে জায়গা করে নিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। ফলে নতুন শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই জনশক্তির সিংহভাগ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বন্ধ হয় বাহরাইনের শ্রমবাজার। অঘোষিতভাবে বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতও। এছাড়া ২০২৩ সালে বন্ধ হয়ে যায় ওমানের শ্রমবাজার, বর্তমানে শুধু পেশাজীবী লোক নিচ্ছে দেশটি। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার ও কুয়েতে নিয়মিতভাবে জনশক্তি রপ্তানি হচ্ছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে। কিন্তু সেগুলো কার্যকর নয়। আরেকটি বিষয় হলো ইউরোপের যেসব দেশে শ্রমিক যাচ্ছেন সেগুলোতে নিয়মিত মাইগ্রেশন হচ্ছে না। সেসব দেশে ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সর্বশেষ পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে কাজের উদ্দেশে বিদেশ যাওয়া কর্মীর সংখ্যা ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৫৬২ জন। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা ৩২ লাখ আট হাজার ৮৮ জন। মধ্যপ্রাচ্যের অর্ধেকের বেশি জনশক্তি পাঠানো হয়েছে সৌদি আরবে ২৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫ জন। কাতারে গেছে এক লাখ ৬৯ হাজার ৯৬৮ জন, কুয়েতে ৯৩ হাজার ৬৮৪ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুই লাখ এক হাজার ৭০২ জন, ওমানে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৬১৬ জন। এছাড়া বাহরাইনে গেছে ২৩ জন।
একই সময়ে ইউরোপের ২৮টি দেশে পাঠানো হয়েছে ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন শ্রমিক। গত পাঁচ বছরে ইউরোপের ইতালি, ক্রোয়েশিয়া, বুলগেরিয়া, মাল্টা, রোমানিয়া, যুক্তরাজ্য ও গ্রিসে সবচেয়ে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ইউরোপে গেছেন ১৬ হাজার ৭৭ জন, ২০২৩ সালে ৩০ হাজার ৪২৭ জন, ২০২২ সালে ২২ হাজার ৬০০ জন, ২০২১ সালে গেছে পাঁচ হাজার ৪৯ জন ও ২০২০ সালে এক হাজার ৫১৫ জন।
২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই পাঁচ বছরে উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় গেছেন এক হাজার ৯৫৬ জন শ্রমিক। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন মাত্র ৪৬ জন। কানাডায় এক হাজার ৯১০ জন।
২০১৮ সালে নতুন ৫৩টি দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ শ্রমবাজার গবেষণা সেল গঠন হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই সেল কার্যত অচল। অনেক বছর ধরে নতুন কোনো শ্রমবাজার তৈরি করা যাচ্ছে না। গত দেড় দশকে ৯৭টি দেশ থেকে বাড়িয়ে ১৬৮টি দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলেও এর মধ্যে বেশিরভাগ দেশেই কর্মী যাচ্ছে হাতে গোনা।
কর্মীদের জন্য নতুন শ্রমবাজার খুলতে না পারলে নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশেই চাপ পড়ে বারবার। ফলে সেখানে কিছুদিন পরপর নিষেধাজ্ঞার কারণে শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। সেজন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরি ও কম খরচে ইউরোপে পাঠানোর বৈধ ব্যবস্থা, এই দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় ইউরোপে বৈধ পথে যাওয়ার চ্যানেল কম এবং যাওয়ার খরচ বেশি হওয়ায় ইউরোপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। এদিকে, ইউরোপে যাওয়ার জন্য অনেক দেশের দূতাবাস বাংলাদেশে না থাকায় বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হয় গমনেচ্ছুদের। ইউরোপগামী ভিসাপ্রত্যাশী ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মেহেদী হাসান আশিক বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে অভিবাসন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে যাত্রা করা নাগরিকদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের কনস্যুলেট ও দূতাবাসের কার্যক্রম না থাকায় নাগরিকদের প্রায় ভারত অভিমুখী হতে হচ্ছে। এতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সময় অপচয় হচ্ছে। ভারতের ভিসা ও দূতাবাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ভারতে গিয়েও হয়রানির শিকার হতে হয়। এরপর ভিসা না হলে তো সব টাকা নষ্ট।