আন্দোলন হলেই দমন হতো, ঢাবি প্রশাসন বিচার করত না: নাহিদ ইসলাম
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১২:৩৮ অপরাহ্ন | রাজনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৫ বছরে যে নির্যাতন হয়েছে, সেই ইতিহাস সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ হওয়া উচিত। আমরা যখন প্রথম, দ্বিতীয় বর্ষে ছিলাম তখন দেখেছি, আন্দোলন হলে সেখানে দমন করা হতো। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসবের বিচার নিশ্চিত করতে কোনো ধরনের ভূমিকা রাখেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে বিগত সময়ে শিক্ষার্থীদের শত শত নিপীড়নের ঘটনার অভিযোগপত্র পাওয়া যাবে। কোন অভিযোগপত্রের বিচার করা হয়নি।সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের সম্মাননা দিতে ‘দ্যা হিরোজ অব ঢাকা ইউনিভার্সিটি’ শীর্ষক অনুষ্ঠান আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।অনুষ্ঠানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিষয়ে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নানামাত্রিক ভূমিকার কথা আমরা জানি। বিগত ১৫ বছর শিক্ষকদের একটি অংশ নিজেদের ফ্যাসিবাদের দালাল হিসেবে প্রমাণে ব্যস্ত ছিল। আবার কিছু সংখ্যক শিক্ষক মেরুদণ্ড নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা আইনের ভিত্তিতে বিচার নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। আইনের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে কাঠগড়ায় দাঁড় করাব। আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ এই নামে ও মতাদর্শে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবে না। এটিই আমাদের শহীদদের প্রতি অঙ্গীকার।তথ্য উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরশাসনের ১৫ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল-ক্যাম্পাসে নির্যাতন, নিপীড়ন ও ভয়ের সংস্কৃতি চালুর মধ্য দিয়ে আমাদের সব কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ স্বৈরশাসকরা ভালো করেই জানে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে গেলে সমগ্র জাতি দাঁড়িয়ে যাবে এবং পরিবর্তন আসন্ন হবে।নাহিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি জায়গা একেকটি ইতিহাস বহন করে। বাংলাদেশের ইতিহাস বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় পরিবর্তনের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেয়। ফলে সব স্বৈরশাসকরাই সব সময় চেষ্টা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দমন করে রাখতে।তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমরা যে পরিবর্তনের স্বাদ এখন পাচ্ছি তা যদি অব্যাহত থাকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যদি আত্মমর্যাদা নিয়ে দাঁড়াতে পারেন, মেধার স্বাক্ষর যদি অব্যাহত রাখতে পারেন, যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও একাডেমিক পরিবেশ অব্যাহত থাকে, তাহলে এই জাতির পরিবর্তন হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে যে পথ দেখিয়েছে, সেই পথ ধরে আমরা এগিয়ে যাব।
তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের এখন প্রয়োজন স্বাধীনতাকে রক্ষা করা। এই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে রক্ষা করা। আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ফ্যাসিবাদের দোসররা নানা আস্ফালন দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা বলতে চাই, জুলাই মাসকে ভুলে যাবেন না। জুলাইয়ের চেতনা শেষ হয়ে যায়নি। যদি বিন্দু পরিমাণ আস্ফালনের চেষ্টা করা হয়, আমরা দ্বিগুণ শক্তিতে প্রতিহত করব। জুলাইয়ের স্পিরিটকে ধারণ করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদসহ অনেকে।