এ যুগের আসমানী হনুফা বেগম
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২০, ১২:১২ পূর্বাহ্ন | জনদুর্ভোগ

আপনারা নিশ্চয়ই পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’ কবিতা পড়েছেন। কবিতাটি পড়ে কেউ কেঁদেছেন আবার কেউ ছুটে গিয়েছেন আসমানীকে দেখতে। রসুলপুরের আসমানী আর এই পৃথিবীতে নেই। কিন্তু তার মতো হাজারো আসমানী বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে আছেন।
কবি মূলত আসমানী চরিত্রের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বোঝাতে চেয়েছেন। কবি নিদারুণ দারিদ্র্যের ও সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্যের মাঝে একটি মানুষ কীভাবে বেঁচে থাকে, সেই অবস্থা উপস্থাপন করতে চেয়েছেন।
আপনাদের এ যুগের এক আসমানী হনুফা বেগমের জীবন সংগ্রামের কথা বলব।
হনুফা বেগমের জন্ম গত শতাব্দীর ষাটের দশকের দিকে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গাজিরচরে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন তিনি। দেখলে মনে হয় দু’মুঠো ভাত পেট পুরে খেতে পান না অনেক দিন। পাঁজরের হাড় দেখা যায় বাইরে থেকে। চোখ দুটো যেন ভেতরে চলে গেছে। তার চোখ দিয়ে যেন সারা বাংলার অসহায় ও অবহেলিত শত কষ্টের কথাগুলো বের হয়ে আসছে।
হনুফা বেগমের আগে একটি বসত ভিটা ছিল। কিন্তু তেঁতুলিয়া নদীর ভয়াল থাবা তার স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ ভিটেমাটিও নিয়ে গেছে। ৬ বার নদী ভাঙ্গনের শেষে এখন থাকেন তেঁতুলিয়া নদীর তীরে একটি টং ঘরে। একে তো নদীর পাড়ে, তারপর একটু ঝড়-বৃষ্টি হলে ঘর দিয়ে পানি পড়ে, শোবার বিছানা-বালিশ সবই ভিজে যায়। এভাবে তার কষ্টের যেন সীমা নেই।
একদিন গেলাম তাকে দেখতে। আমাকে দেখেই দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন হনুফা বেগম। তিনি ভেবেছিলেন, এই বুঝি কেউ দু’মুঠো ভাত নিয়ে তাকে দেখতে এসেছেন। তার স্বামী মারা গেছেন ১০ বছর হলো। ছেলে-সন্তানেরা তাকে দেখে না বললেই চলে। এলাকার মানুষের দানে কোনো মতে চলে তার সংসার।
করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও প্রতিদিন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হনুফা বেগমের পাশের গ্রামেও একজন করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে।
দেশের এই সংকটকালীন হনুফা বেগমকে মাঝে মাঝে না খেয়েও দিন কাটাতে হয়। তিনি প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখেন দেশের কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তি সকালে তার ওই চিলেকোঠায় খাবার দিবে যাবেন। আর দু’মুঠো ভাত সে পেট পুরে খাবেন। তবে, তার এই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যায়। সেই সকাল আর বাস্তবে দেখা হয় না।
হনুফা বেগম বলেন, ‘আমি বুইরা মানুষ কোনো কাম করতে পারি না।
সরকার নাকি চাইল দিছে। আমারে তো দিলো না। ম্যাঘ আইলে ঘর দিয়া পানি পরে। অনেক কষ্ট অয় আমার।’
লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা কলেজ।