সাবেক নির্বাচন কমিশনারদের যে সাজা হতে পারে, কী আছে আইনে?
প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন | রাজনীতি

প্রহসনের নির্বাচনের অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, কে এম নূরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বিএনপি। দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং মামলা, গুম, খুন ও তথ্য সংরক্ষণ সমন্বয়ক সালাহ উদ্দিন খান বাদী হয়ে গত রোববার (২২ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এ মামলা করেন।
এ মামলায় এরই মধ্যে গতকাল বুধবার মগবাজার থেকে হাবিবুল আউয়াল ও গত রোববার উত্তরা থেকে নূরুল হুদাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার নূরুল হুদার চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। হাবিবুল আউয়ালের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে ডিবি। বিএনপির করা এ মামলায় দণ্ডবিধি আইনের মোট সাতটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব ধারায় নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭১(খ) ধারায় নির্বাচনী অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ লেনদেনের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। ১৭১(ঘ) ধারায় বর্ণিত জালভোট প্রদান ও এতে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে।
এছাড়া ১৭১(ছ) ধারায় বর্ণিত নির্বাচন সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া অভিযোগও আনা হয়েছে। এ ধারাটিতে বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নির্বাচনের ফল প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত চরিত্র বা আচরণ সম্পর্কে সত্য ঘটনা বলে এমন কোনো বিবৃতি দান বা বিবরণ প্রকাশ করে যা মিথ্যা এবং যা সে মিথ্যা বলে জানে বা বিশ্বাস করে কিংবা সত্য বলে বিশ্বাস করে না, তবে সেই ব্যক্তি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।” নির্বাচন সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়ার এ ধারায় শুধু অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।আসামিদের বিরুদ্ধে করা মামলার সবগুলো ধারাই জামিনযোগ্য। এতে তাদের কারাগারে আটকে রাখাই যায় না। সেখানে আরও চারদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।- আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম
মামলাটিতে দণ্ডবিধির ১৭১(জ) ধারায় বর্ণিত নির্বাচনে অবৈধ অর্থ প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। এ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা হতে পারে নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য আসামিদের।
দণ্ডবিধির ১৭১(ঝ) ধারায় বর্ণিত নির্বাচনী হিসাব না রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়। বিচারে এ ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হলে নির্বাচনে কারচুপিতে জড়িত আসামিদের সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনে নির্বাচন সংক্রান্ত জালিয়াতির ১৭১ ধারায় এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব ধারার কোনোটিতেই কারাদণ্ডের কোনো বিধান নেই। তবে এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ১২০(খ) ধারায় যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেই বিধিতে বলা হয়েছে, “কেউ যদি দুই বছরের অধিক বা যাবজ্জীবন কিংবা মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করে, আর এই অপরাধ সংঘটনের জন্য কেউ যদি পরিকল্পিতভাবে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে, তাহলে সে ব্যক্তিও সমান সাজা পেতে পারেন।” অর্থাৎ খুনির সঙ্গে খুনের ষড়যন্ত্রকারীও সমান সাজা পেতে পারেন।
তবে নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আনা দণ্ডবিধি আইনের ১৭১ ধারার অভিযোগগুলোর কোনোটিতেই সাজার বিধান নেই। ফলে এ ধারার অপরাধ সংঘটনের জন্য নির্বাচন কমিশনাররা ষড়যন্ত্র করলেও তাদের এ ধরনের দণ্ড দেওয়া সম্ভব হবে না।
এখন তো এজাহারে কিছু ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটির তদন্তকালে তাদের বিরুদ্ধে আরও অপরাধের তথ্যপ্রমাণ বের হয়ে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও ধারা বাড়বে।- পিপি ওমর ফারুক ফারুকী
তবে আইনটির ১২০(খ) ধারার দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, “কোনো ব্যক্তি যদি দণ্ডসমূহের দণ্ডনীয় অপরাধ (সাজা হওয়ার মতো অপরাধ) সংঘটনের জন্য পরিকল্পিত অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ছাড়াই অন্য কোনোরূপ অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে (যে অপরাধে সাজা হয় না) শরিক হয়, তবে সেই ব্যক্তিকে অনধিক ছয় মাস পর্যন্ত যে কোনো মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে অথবা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে অথবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত করা যাবে।”
অর্থাৎ, ১২০(খ) ধারার দ্বিতীয় অংশে বর্ণিত দণ্ডনীয় অপরাধ ছাড়াও যেকোনো অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের সাজা হতে পারে। এক্ষেত্রে মামলাটিতে এ ধারায় বর্ণিত অপরাধমূলক যড়যন্ত্রের অভিযোগ বিচারে প্রমাণিত হলেই কেবল সর্বোচ্চ ছয় মাসের সাজা হতে পারে নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য আসামিদের।
মামলার অভিযোগে আনা ধারাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব ধারা জামিনযোগ্য। এ ধরনের ধারার মামলায় আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি কারাভোগ ছাড়াই জামিন পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে এ মামলায় আইন অনুযায়ী তাদের কারাগারে আটক রাখা দুষ্কর বলে জানান আইন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ মামলার ধারাগুলোতে তেমন বড় সাজার বিধান নেই। ধারাগুলোও জামিনযোগ্য৷ ফলে আসামিরা জামিন পাওয়ার হকদার হবেন।’
এ প্রসঙ্গে সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদার আইনজীবী ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে করা মামলার সবগুলো ধারাই জামিনযোগ্য। এতে তাদের কারাগারে আটকে রাখাই যায় না। সেখানে আরও চারদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।’
মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো হলো- নির্বাচনে জালভোট প্রদান, নির্বাচনী হিসাব না রাখা, নির্বাচনে কোনো প্রার্থী সম্পর্কে মিথ্যা বিবৃতি দেওয়া ইত্যাদি। ঢাকায় বসে নির্বাচন কমিশনাররা এসব অপরাধের সঙ্গেই কোনোভাবেই জড়িত থাকতে পারেন না।’
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘এখন তো এজাহারে কিছু ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটির তদন্তকালে তাদের বিরুদ্ধে আরও অপরাধের তথ্যপ্রমাণ বের হয়ে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে আরও ধারা বাড়বে।’
নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা দায়ের হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। অভিযোগ প্রমাণের বিষয়ে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব ধারার অভিযোগ রয়েছে, তা প্রমাণের জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করবো। চেষ্টা থাকবে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করার জন্য।’
নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। এরজন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করার সুযোগ নেই।- মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শামসুজ্জোহা সরকার
এ মামলায় গত ২২ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে ‘মব’ তৈরি করে আটক করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, লুঙ্গি পরিহিত সাবেক এ সিইসিকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেয় জনতা। পরে তাকে উত্তরা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওইদিন রাতেই তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরদিন সোমবার আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এজলাসে থাকাকালে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক শামসুজ্জোহা সরকার আদালতকে বলেন, ‘নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। এরজন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করার সুযোগ নেই।’
প্রহসনের নির্বাচনের অভিযোগে বিএনপির করা ২২ জুনের মামলায় আসামি হিসেবে যে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাবেক তিন সিইসি ছাড়াও রয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ অন্য সরকারি কর্মকর্তারা।
এছাড়া ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের তৎকালীন সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ, নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারক, আবু হানিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী, শাহ নেওয়াজ ও তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সচিবসহ প্রধান নির্বাচন কমিশন অফিসের অন্য কর্মকর্তা।২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সিইসি এ কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে একই সময়ে দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী, তৎকালীন ঢাকা মহানগরের পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত), জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক প্রধান (অজ্ঞাত) এবং পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সৈয়দ নুরুল আলমের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।একই সঙ্গে মামলায় আসামিদের তালিকায় ২০২৪ সালে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব, আলমগীর হোসেন, আনিছুর রহমানসহ তৎকালীন নির্বাচন সচিবেরও নাম আছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০০৯ সালে তৎকালীন সামরিক শাসকদের সহায়তায় অবৈধভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে শেখ হাসিনাসহ তার সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসে বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর নেতাকর্মীদের অপহরণ, গুম, গুরুতর জখম, হত্যা ও বিভিন্ন উপায়ে নির্যাতন শুরু করে। এ নির্বাচনে তাকে ক্ষমতায় বসাতে কাজ করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন।নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে আনা দণ্ডবিধি আইনের ১৭১ ধারার অভিযোগগুলোর কোনোটিতেই সাজার বিধান নেই। ফলে এ ধারার অপরাধ সংঘটনের জন্য নির্বাচন কমিশনাররা ষড়যন্ত্র করলেও তাদের এ ধরনের দণ্ড দেওয়া সম্ভব হবে না২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আসামি কে এম নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত করেন। এ কমিশন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন। তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে থাকেন। বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে শেখ হাসিনা তখন অঙ্গীকার করেন যে, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রতিষ্ঠার জন্য যা যা করা দরকার তিনি তা-ই করবেন।
শেখ হাসিনার এ আশ্বাসে বিএনপিসহ সব দল ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপিসহ বিভিন্ন দল মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে গেলে অনেক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের বাধার সম্মুখীন হয়। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা প্রচারণায় বের হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের ক্যাডারদের দ্বারা আক্রমণের শিকার, গুরুতর জখম, গাড়ি ভাঙচুর ও ভোটের প্রচারণায় বাধার মুখে পড়েন।
ওই নির্বাচনে দলীয় সমর্থক ও নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে তাদের ওপরও আক্রমণ, গুরুতর জখম, হত্যা, অপহরণ, গুম শুরু হয়। একই কৌশলে সারাদেশে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা তৈরি করে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও বিএনপি সমর্থিত ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়। কোনো প্রকারেই ভোটের প্রচারণায় বের হতে না পারায় বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনী পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য এবং এসব ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিএনপি মহাসচিবের সই করা চিঠির মাধ্যমে তৎকালীন সিইসি নূরুল হুদার কাছে আবেদন করা হয়।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, নূরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা তথা নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সে সময় কোনো প্রকার আইনি পদক্ষেপ নেয়নি।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, তৎকালীন অবৈধ সরকারের প্রধান শেখ হাসিনাসহ নির্বাচন কমিশনাররা পূর্ণ সহায়তা করে অবৈধভাবে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন সমাপ্ত করার পরিকল্পনা করে। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া স্বত্ত্বেও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ২০১৮ সালের নির্বাচনে সম্পূর্ণভাবে জনগণকে তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে সংবিধানের পরিপন্থি কাজ করে ও নির্বাচন আচারণবিধি লঙ্ঘন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিতদের দিয়ে দিনের ভোট রাতে করে ব্যালট বক্স ভর্তি করে রাখে।
এভাবেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করে এবং বিএনপির ৬ জন সংসদ সদস্যকে বিজয়ী ঘোষণা করে একাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করে। নূরুল হুদা তার একক নির্দেশে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে বিএনপি, ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা দেন। এ কাজের জন্য তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, একই ভাবে ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য আসামিরা আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।