মামলা বাণিজ্য: পাবনার ঈশ্বরদীতে বাদীর অমতে মামলার আসামী ওবায়দুল

 প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৫৫ অপরাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ

মামলা বাণিজ্য: পাবনার ঈশ্বরদীতে বাদীর অমতে মামলার আসামী ওবায়দুল

গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশে মামলা বাণিজ্যের একটি অসাধু চক্র গড়ে ওঠে।  এই চক্র ভুয়া মামলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নাম ঢুকিয়ে আবার কেটে দেওয়ার নামে কামিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। দেশজুড়ে এই চক্রটি এক আতঙ্কের নাম। ‘মামলা বাণিজ্য’ চক্রের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় রাজনীতিক, অসাধু আইনজীবী এবং পুলিশ। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহল থেকে বলা হয়েছে, বানোয়াট এসব মামলা তদন্তের সময় পর্যালোচনা করা হবে। দায়িত্বশীলদের এমন বক্তব্যর পর কোনো কোনো এলাকায় পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্তকাজ করলেও বেশির ভাগ থানার পুলিশ রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব মামলা তদন্তের নামে ‘মামলা বাণিজ্যে’ জড়িয়ে পড়ছেন অনেক পুলিশ কর্মকর্তা। তাঁরাও মামলার আসামি থেকে নাম বাদ দেওয়ার নাম করে কামিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। যে কারণে পুলিশের ভূমিকাকে অনেকে রহস্যজনক বলে উল্লেখ করেছেন। আবার মামলায় যেসব পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে, তাঁদের কাছ থেকেও চাঁদা দাবি করছেন ‘মামলা বাণিজ্য’ চক্রের সদস্যরা।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, চাঁদাবাজি, পূর্বশত্রুতা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এসব বানোয়াট মামলা করা হচ্ছে। এসব বানোয়াট মামলার পেছনে রয়েছে জমি দখল এবং হয়রানি করার ঘটনাও। আর ‘মামলা বাণিজ্য’ করতে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, সরকারি কর্মকর্তাসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। আবার অনেক মামলার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বাদী যেমন আসামিকে চেনেন না, আসামিও বাদীকে চেনেন না। কোনো কোনো মামলায় বাদী হিসেবে নিজের নাম  দেখে বাদী নিজেই চমকে উঠছেন।  প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের হিড়িক এখনও সমানতালে চলছে। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একের পর মামলা হচ্ছেই। থেমে নেই প্রতারক চক্রগুলোও। মামলা হওয়ার আগেই একটি প্রতারক চক্র কম্পিউটারের দোকানগুলো থেকে ভুয়া মামলার কপি ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। যাদেরকে এসব ভুয়া মামলায় আসামি করা হয়, তাদের মামলার কপি মেসেঞ্জার বা হোয়াটস অ্যাপে পাঠিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।  

ব্যতিক্রম ঘটেছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। গত ৮ ডিসেম্বর ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়নের বাঘইল কাঁঠালতলা মোড়ের বিএনপি পাকশী ইউনিয়ন ০৮নং ওয়ার্ড অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে হয়ে মোঃ আইনুল হক ও হাজ্বী সেলিমকে আসামীরা হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারী গুলি বর্ষণ করে মারাত্বক জখম করে। পাশ্ববর্তী দোকানের দোকানী নাসিম প্রানে বাঁচার জন্য দৌড়ে পালাতে গেলে তাকে তারা গুলি করে। এতে নাসিমের তিনটি দাঁত ভেঙ্গে যায়।  পরবর্তীতে আসামীগণ বিএনপি অস্থায়ী কার্যালয়ের ভিতরের খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান, তারেক রহমান ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব এর ছবিসহ কার্যালয় আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়।

আইনুল, হাজ্বী সেলিম ও নাসিমদের স্বাক্ষী ও স্থানীয় লোকজন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করে। আইনুল ও হাজ্বী সেলিমের শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এজাহারে ২১ জনের নাম এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করা হয়। এজাহারভুক্ত ২১ নং আসামী মোঃ ওবায়দুলের আমেরিকা প্রবাসী পুত্র ঢাকা ফিরেন এবং তাকে অভ্যর্থনা জানাতে ওবায়দুল রাজধানীর শাহজালাল এয়ারপোর্টে যান। সেখান থেকে ফিরে তিনি তার ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনায় কর্মস্থল এলিফ্যান্ট রোডের কনকর্ড এম্পোরিয়ামে ছিলেন।  এবিষয়ে মামলার বাদী মোঃ শামছুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ঘটনার দিন বা তার এক বছরেরর মধ্যে ওবায়দুল'কে ঈশ্বরদী দেখা যায়নি। তিনি এই ঘটনায় জড়িতও ছিলেন না।

জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: