কৃষকের ভাগ্য বদলের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে কফি চাষ
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪, ১১:৫১ অপরাহ্ন | সারাদেশ

মোঃ লিহাজ উদ্দিন (পঞ্চগড়) :
দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী চা,পাথর ও কৃষি সমৃদ্ধ জেলা পঞ্চগড়ে অর্থকরী ফসল হিসেবে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে কফি চাষ। কৃষকের ভাগ্য বদলের নতুন দ্বার হিসেবে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বেশ কিছু কফি বাগান। আবাদি জমি দখল করে নয়, চাষ হচ্ছে ছায়াযুক্ত বাগানে সাথী ফসল হিসেবে। চা'পানের পাশাপাশি মানুষের আগ্রহ বেড়েছে কফি পানে। আগে ধন্যাঢ্য পরিবারের মধ্যে কফি পান সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন মধ্যবিত্ত,নিম্ন মধ্যবিত্তের পরিবারেও মাঝেও তা ব্যবহার হচ্ছে। জেলা শহরের হোটেল গুলোতে আগে কফি বিক্রি না হলেও এখন প্রায় সব হোটেলে এমনকি ছোট চা বিস্কুটের দোকানেও এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইচ্ছা শক্তি আর অদম্য মনোবলের অধিকারী কৃষক আব্দুল হালিম প্রধান। কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত দুই বছর আগে সুপারি বাগানে সাথী ফসল হিসেবে রোপন করেন কফির চারাগাছ। অল্প সময়ের মধ্যেই ফল এসেছে গাছগুলোতে। তবে বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছেন তিনি। তার দাবি, বাজারজাত সহজ হলে সাথি ফসল হিসেবে যেমন বাড়তি আয় হবে, তেমনি বাড়বে চাষের পরিধিও।
আব্দুল হালিম প্রধানের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিষমুনি গ্রামে। দুই বছর আগে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় তার বাড়ি সংলগ্ন ছায়াযুক্ত সুপারি বাগানে ১৩৫টি কফি চারা রোপন করেন। তার মত জেলার আরও ৪৭ জন কৃষক কফি চাষ করেছেন। তবে অন্যদের এখনো ফল আসা শুরু হয়নি।
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে কফি গাছ। কফি গাছ গুলোর পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক আব্দুল হালিম প্রধান। অধিকাংশ গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুঁলে আছে কফি ফল। পরিপক্ব ফলগুলো উত্তোলন করে ঘরে রাখা হচ্ছে। এই ফলগুলোই প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি হবে পান যোগ্য কফি।
কফি চাষী আব্দুল হালিম প্রধান বলেন, একদিন কৃষি বিভাগের লোকজন আমাকে এসে বলেন সুপারী বাগানে কফি চাষের কথা। পরে তারা আমাকে ৩৩ শতক জমির জন্য ১৩৫টি কফির চারা দেন। তাদের পরামর্শে চারাগুলোর জমিতে লাগাই এবং যত্ন শুরু করি। দুই বছরের মধ্যে গাছগুলোতে ফল এসেছে। অনেক গাছে ফুল ফুটেছে। কিছু গাছে ফল পাঁকতে শুরু করেছে। আমি কিছু ফল গাছ থেকে তুলেছি নিজে কফি বানিয়ে খাওয়ার জন্য। আর বাকীগুলো কয়েকদিনের মধ্যে তুলবো। যদি বাজারজাত করা যায় আর দাম ভালো পাই, আশা করি লাভের মুখ দেখতে পারবো।
জেলার সদর উপজেলার ভাণ্ডারু গ্রামের কৃষক বেলাল বলেন, আমি কফির বাগান দেখতে এসেছি। কিভাবে চাষাবাদ করতে হয় তা হালিম ভাইয়ের কাছ থেকে জেনে নিব। তারপর আমার দুইবিঘা সুপারীর বাগানে চারা লাগাব। এটা সুপারি বাগানে বাড়তি আয় এনে দিবে।
জেলা শহরের হোটেল শ্রমিক আলম বলেন, মানুষ এখন চা'য়ের চেয়ে কফি বেশি পান করছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন,সহজলভ্য ও সাধ্যের মধ্যে দাম হওয়ায় মানুষের কফি পানে আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২১ সালের শেষের দিকে ‘কফি ও কাজু বাদাম গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ আওতায় জেলার তিন উপজেলায় রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। জেলার মাটি ও আবহাওয়া কফির জন্য উপযোগী হওয়ায় সুপারি সহ বিভিন্ন বাগানের ছায়াযুক্ত ফাঁকা জায়গায় গড়ে উঠছে কফি বাগান। চাষীদের কফি বীজ, কারিগরী সহায়তাসহ নানা পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ। চারা রোপনের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যেই ফল আসা শুরু হয় গাছগুলোতে। এটি দীর্ঘ মেয়াদি ফসল। প্রতি বিঘা বাগানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কফি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার ৪৭ জন কৃষক ৯১ দশমিক ৮১ হেক্টর জমিতে গড়ে তুলেছেন ৭৪টি কফি বাগান।
সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বলেন, কফি চাষের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানের প্রয়োজন। যেখানে ছায়া থাকে সেখানেই কফি ভাল হয়। বাড়তি কোন জমি এবং তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না। শুধুমাত্র আগাছানশক স্প্রে এবং ছত্রাক নাশক স্প্রে করায় এ পানীয় চাষে কৃষকের খরচ কম হয়।
পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) শাহ্ আলম মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে চারা, কীটনাশক, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। কফির বাজার ব্যবস্থাপনা ও ফল সংরক্ষণ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। তিনি আশা করেন, পঞ্চগড়ের আবহাওয়া কফি চাষে অনুকূল হওয়ায় কফির ভালো ফলন হবে এবং কৃষকেরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন।