‘সবাই যদি বলে ভাগ ভাগ, তাহলে রোগীর কী হবে’

 প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২০, ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ

‘সবাই যদি বলে ভাগ ভাগ, তাহলে রোগীর কী হবে’

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ব্রেইন স্ট্রোকের পর কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরেও মুক্তিযোদ্ধা আলমাছ উদ্দিনকে ভর্তি করানো যায়নি; ফলে অনেকটা বিনা চিকিৎসায়ই তার মৃত্যু ঘটেছে বলে পরিবারের অভিযোগ। এই ঘটনা শুনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তার সহযোদ্ধারা; মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক যুগ্মমহাসচিব (নির্বাচিত) সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু বলেছেন, সবাই যদি এভাবে ‘ভাগ, ভাগ’ বলে তাহলে এই সঙ্কটকালে রোগীর কী হবে?

ছোঁয়াচে রোগ কোভিড-১৯ রোগী বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সাধারণ সর্দি-জ্বরের রোগীদের হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে।

এর মধ্যেই ৬৮ বছর বয়সী মুক্তিযোদ্ধা আলমাছ উদ্দিনের ব্রেইন স্ট্রোক হয় শনিবার তার ঢাকার বাসাবোর বাড়িতে।

এ মুক্তিযোদ্ধার তিন সন্তানই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। দুই ছেলে সদ্য পাস করে চাকরির অপেক্ষায় রয়েছেন। মেয়ে ইংরেজি সাহিত্য থেকে পাস করে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

আলমাছ উদ্দিনের সন্তানরা জানান, তাদের বাবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে হয়েছে।

শেষে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বাঁচানো যায়নি। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি বাসাবো মাঠে বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র সমর্পণকারী মুক্তিযোদ্ধা আলমাছের এই মৃত্যৃকে

বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার ঘটনা মনে করছেন মুক্তিযোদ্ধা টিপু। তিনি ফেইসবুকে লিখেছেন, “বারডেম হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পপুলার হাসপাতালে, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করে নাই বলে জানান মরহুমের বড় ছেলে। রাত ১২টায় মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করে, সকালে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুর পরে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হল ‘ব্রেইন স্ট্রোক’।”

রোববার দুপুরে বাসাবো মাঠে জানাজার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মাদারটেক কবরস্থানে দাফন করা হয় আলমাছকে। মুক্তিযোদ্ধা আলমাছ ‘বিনা চিকিৎসায়’ মারা যাওয়ায় তার সন্তানদের সহায়তার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন টিপু।

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তিনি  বলেন, “যে কোনো নাগরিকের চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এখন সবখানে যদি বলে ভাগো, ভাগো- তাহলে কী হবে? মুক্তিযোদ্ধা আলমাছের তিনটি সন্তান হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেছে। কিন্তু করোনা সন্দেহে কেউ চিকিৎসা দেয়নি।” এই সময়ে কোনো রোগীকে ফিরিয়ে না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের।

তবে এনিয়ে বারডেম হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পপুলার হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল কর্তৃপক্সের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শ্বাসতন্ত্রের রোগ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার তথ্য আইইডিসিআরও পাচ্ছে বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সংস্থার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি বলেন, “এ ঘটনা অনেক দিন ধরেই হচ্ছিল। চিকিৎসকরা কেন যান না, হয়ত তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি থাকতে পারে যে, আমরা যেহেতু রোগীর সংস্পর্শে যাব তখন কী হবে?

“সেক্ষেত্রে চিকিৎসকদের উৎসাহিত করার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। আমাদের পরিচালক (হাসপাতাল) এ বিষয়টি বিশেষভাবে দেখছেন। প্রত্যেকটি হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাটি কীভাবে সমাধান করা যায় সে চেষ্টাটি আমাদের দিক থেকে সর্বাত্মভাবে করছি।”



জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: