কোস্ট ফাউন্ডেশনে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব : উপকূলীয় দরিদ্র মানুষের উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত

 প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ০৭:২৮ অপরাহ্ন   |   জেলার খবর

কোস্ট ফাউন্ডেশনে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব : উপকূলীয় দরিদ্র মানুষের উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত


বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার :

উপকূলীয় জনপদের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) কোস্ট ফাউন্ডেশন বর্তমানে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই সকল অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র, ক্ষতিগ্রস্ত কর্মী ও বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।


অনুসন্ধানে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বেই একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কক্সবাজার জেলায় কোস্ট ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। কর্মীদের বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ জোরপূর্বক কেটে নিয়ে আত্মসাৎ করা, প্রকল্পের কাজের জন্য অগ্রিম অর্থ প্রদান থেকে  নগদ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের মতো গুরুতর অভিযোগের তীর এখন কোস্ট ও এই কর্মকর্তার দিকে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থার একাধিক বর্তমান ও সাবেক কর্মী জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই চক্রটি নিজেদের খেয়ালখুশি মতো প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করছেন এবং ভুয়া বিল ভাউচারে মাধ্যমে তা সুচতুর ভাবে সম্বন্বয় করছেন। কর্মীদের অভিযোগ, তাদের বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ কেটে নিয়ে নিজস্ব তহবিলের নামে আত্মসাৎ করলেও চাকরি হারানোর ভয়ে চুপ করে আছি। এছাড়াও, প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে অল্প টাকার মাধ্যমে কাজ শেষ করে ভুয়া বিলে চলছে প্রকল্প।স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, কোস্ট ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে কাজ না করেই অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।


ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, তাদের উন্নয়নের নামে আসা অর্থ লুটপাট করা হয়েছে, যার ফলে তারা কোনো প্রকার সুফল পাননি। ভুয়া বিল ও ভাউচার তৈরির মাধ্যমে প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগও উঠেছে জাহাঙ্গীর আলম ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগও পাওয়া গেছে। অভিযোগ রয়েছে, যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমনকি, একাধিক পদে এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, জাহাঙ্গীর আলম অর্থের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকেও ম্যানেজ করে নিজেদের অপকর্ম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও, সাংবাদিকদের সাথে সখ্যতা রেখে কৌশলে এসব লুটপাট ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। জাহাঙ্গীরের গাড়ি-বাড়ি ও জমি এবং অঢেল সম্পদের মালিক হওয়ার সাথে তার বেতনের কোন সঙ্গতি নেই।

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের উখিয়া টেকনাফের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি ও সাবেক হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমলের ঘনিষ্ঠভাজন ও আওয়ামীলীগের জেলা পর্যায়ের নীতিনির্ধারক পরিচয় দিয়ে এতোদিন দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সর্বত্র। আদায় করেছেন অনৈতিক সুবিধা।  এমনকি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে দমনে সংস্থার  পক্ষ থেকে অর্থায়নসহ সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে হামলার মদদদাতা ও প্রশাসনকে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নেতাদের তথ্য সরবরাহের মাধ্যমে দমনের অভিযোগও রয়েছে।  ক্ষমতার পট পরিবর্তন খোলস পাল্টে আবার ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন বিএনপি নেতৃস্থানীয়দের সাথে।

আশ্চর্য্যের বিষয় হলো, ইতিপূর্বে এই কর্মকর্তা ও সংস্থার বিরুদ্ধে দাতা সংস্থাসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত হলেও, সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরীর আস্থাভাজন হওয়ায় তিনি সুকৌশলে তার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পার পেয়ে যান।   চাকরি হারানো একাধিক কর্মী এই প্রতিবেদককে জানান, তারা জাহাঙ্গীর আলমের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে অবগত এবং তাদের কাছে এর প্রমাণও রয়েছে। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।   এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কোস্ট ফাউন্ডেশনের মূল লক্ষ্য – উপকূলীয় দরিদ্র মানুষের উন্নয়ন – মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।


স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, অবিলম্বে একটি উচ্চপর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা  এবং দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার দাবী সচেতন মহলের। তা না হলে, একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত এই সংস্থাটি সাধারণ মানুষের আস্থা হারাবে। এই বিষয়ে কোস্ট ফাউন্ডেশনের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তার মন্তব্য করতে রাজী হয়নি।

জেলার খবর এর আরও খবর: