করোণা ভাইরাস ধ্বংসের যত উপায়

 প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২০, ০৩:২১ অপরাহ্ন   |   জনদুর্ভোগ

করোণা ভাইরাস ধ্বংসের যত উপায়

ডা.মো.ছায়েদুল হক ::
করোণা সংক্রমনে ধুঁকছে পৃথিবী। ভয়ে তটস্থ মানবকূল।বিজ্ঞানীদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে এই করোণা ভাইরাস।কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, লকডাউন কত কিছূ চলছে। রাস্তাঘাট ফাকা। ভয়ে সব মানুষ এখন গৃহবন্দী। অথচ যার ভয়ে থমকে আছে পৃথিবী তাকে খালি চোখে দেখার কোন উপায় নাই। এটি আরএনএ গোত্রের একটি ভাইরাস স্বাধীনভাবে যার বংশ বিস্তার করার সক্ষমতা নেই। বংশ বিস্তার করতে হলে আশ্রয় নিতে হয় অন্য কোন জীবিত কোষে। বর্তমানে সে তার বংশ বিস্তারের জন্য আশ্রয় নিয়েছে মানবদেহে।

করোণা ভাইরাস বা কোবিড-১৯ এর দৈহিক গড়নটা খুব সাদামাটা করে বললে বলতে হয় ঠিক মাঝখানে আরএনএ চেইন এবং বাহিরে তার ফ্যাট বা লিপিডের স্তর।ফ্যাট এর গায়ে স্পাইকের মত চারিদিকে তার প্রোটিন সন্নিবেশিত থাকে। স্পাইকগুলো তার টুলস । এর মাধ্যমে সে বিভিন্ন বস্তুতে বা মানবদেহের বিভিন্ন কোষের গায়ে আটকে থাকার চেষ্টা করে। অনেকটা গোলাকৃতি ভাইরাসটির আয়তন ১২০ নেনোমিটার। ওজনে অপেক্ষাকৃত ভারী হওয়ায় বাতাসে বেশীক্ষন ভেসে থাকতে পারে না। সাধারণত হাঁচি কাশির শ্লেষ্মোর সাথে মানবদেহ থেকে বের হয়ে বেশীদূর যেতে পারে না। এটি নিচে মাটিতে; ফ্লোরে বা কোন বস্তুর উপর থীতু হয়।



ভাইরাসটি মানবদেহের বাহিরে যতক্ষন থাকে ততক্ষন তার কোন চলনশক্তি বা বংশ বিস্তা করার ক্ষমতা কোনটাই থাকে না। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায যেতে হলে তার বাহন প্রয়োজন হবে।মাটিতে বা ফ্লোরে হাঁচি কাশির শ্লেষ্মা,থুথু ইত্যাদি কারো পায়ে, জুতা, গাড়ীর চাকা ইত্যাদির সংস্পর্শে; কোন বস্তু থেকে হাতের বা দেহের সংস্পর্শের মাধ্যমে অন্য বস্তু যেমন মোবাইল স্ক্রীন,তালাচাবি, ল্যাপটপ,রিমোট কল্ট্রোল, ঘড়ি ইত্যাদিতে আটকে থেকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার সূযোগ পায়।কোন বাহনের সাহায্যে মানবদেহের প্রবেশ করতে না পারলে ভাইরাসটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় নিজ থেকে ক্ষয় হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।এটি হলো করোণা ভাইরাসের একটি দূর্বলতা।সাধারণত কাপড়ে ৩ ঘন্টা, কাঠ কপার ইত্যাদিতে ৪ ঘন্টা, কার্ডবোর্ডে ২৪ ঘন্টা, মেটালে ৪২ ঘন্টা, প্লাস্টিকে ৭২ ঘন্টা সময় ভাইরাসটি তার অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারে। কাপড়ে এটি কয়েক ঘন্টা থাকলেও একদম নির্জীব অবস্থায় থাকে। এমতাবস্থায় কাপড় না ঝাড়াই ভালো। তাতে ভাইরাসটি বাতাসে ছড়িয়ে নাকে মূখে ঢুকার সূযোগ কাজে লাগাতে পারে।আর্দ্রতা ও ঠান্ডায় ভাইরাসটি অধিকতর সতেজ থাকে। ফলে শুস্ক আবহাওয়া, আলোবাতাস ও ২৫ ডিগ্রীর উপর তাপমাত্রা ভাইরাসের জন্য এক ধরণের অস্বস্থি।

দ্বিতীয় দূর্বলতা হলো ভাইরাসটির দৈহিক গড়ন। ভাইরাসের বাহিরের দিকের তৈলাক্ত বা ফ্যাটের আস্তরণটি সাবান পানি দিয়ে ধূলে(২০ সেকেন্ড) নষ্ট হয়ে যায়। ৬০% এলকোহলও একই কাজ করে। বাহিরের তৈলাক্ত আবরণটির অবর্তমানে ভাইরাসের বাকি অংশটি মূখ থুবড়ে পড়ে অর্থাৎ ভাইরাসের বিলুপ্তি ঘটে। আবার ব্লিচিং পাউডারের সংস্পর্শে আসলে ভাইরাসের প্রোটিন অংশটি ডিনেচার্ড বা ক্ষয় হয়ে যায়। এই অবস্থায়ও ভাইরাসের বিলুপ্তি ঘটে।



দেখা যাচ্ছে ভাইরাসের বিলুপ্তির দুটি পথ খোলা আছে। একটি হলো বারবার হাতমুখ সাবান পানি দিয়ে ধূয়ে এবং ব্লিচিং পাউডার দিয়ে কাপড়চোপড় , মেঝে, জুতার তলা, গাড়ীর চাকা ইত্যাদি নিয়মিত ধূয়ে,মোবাইল স্ক্রীন, ল্যাপটপ ইত্যাদি দৈনন্দিন ব্যবহৃত বস্তু সেনিটাইজার দিয়ে নিয়মিত পরিস্কারের মাধ্যমে সড়াসড়ি ভাইরাসটিকে ধ্বংস করা। দ্বিতীয় পথটি হলো হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে, মাস্ক পরিধান করে, যত্রতত্র থুথু ফেলা বা নাক ঝাড়া পরিহার করে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ভাইরাসটিকে নিজ থেকে বিলুপ্ত হতে সাহায্য করা।

মনে রাখতে হবে মানবদেহে ভাইরাসের প্রবেশদ্বার প্রধানত শ্বাসনালী হলেও মুখ এবং চোখ উভয়ই ভূমিকা রাখতে পারে। তাই নাক মুখ চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। স্পর্শ করার আগে হাত ভাল করে ধূয়ে নিতে হবে।ভাইরাসের সংক্রমন থেকে নিজে বাঁচুন এবং অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করুন।


ডা.মো.ছায়েদুল হক 
এমবিবিএস, এফসিপিএস, এমএস (চক্ষু)
চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন
সহযোগী অধ্যাপক (অব:)
কনসাল্টেন্ট
আইডিয়াল আই কেয়ার সেন্টার লিঃ
৩৮/৩-৪, রিং রোড, শ্যামলী, আদাবর, ঢাকা

জনদুর্ভোগ এর আরও খবর: