সাধারণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকের আওতায় আনছে এজেন্ট ব্যাংকিং

 প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন   |   জাতীয়

সাধারণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকের আওতায় আনছে এজেন্ট ব্যাংকিং



এজেন্ট ব্যাংকিং হলো শাখা না খুলে ব্যাংকের তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার একটি ব্যবস্থা। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো জামানত তুলনামূলকভাবে কম লাগে। অল্প জায়গায় করা যায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা। লোকবলও কম লাগে। মূলত এজেন্ট ব্যাংকিং ধারণার সূত্রপাত ব্রাজিল। দ্রুততম সময়ে এ ব্যাংকিং ধারণা ছড়িয়ে যায় চিলি, কলম্বিয়া, পেরু ও মেক্সিকোয়। এমনকি কেনিয়াসহ আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোতে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার এ সেবা চালু হয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারতেও।


আমাদের দেশে যেসব এলাকায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকিংয়ের কোনো শাখা নেই, সেখানে এর মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয় এজেন্ট ব্যাংকিং, বিশেষ করে স্কুল, পথশিশু, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিক, চর এলাকা ও দ্বীপবাসীর কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য। ফলে সেই নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের জন্য বাড়ছে কাজের সুযোগ। বৃদ্ধি পাচ্ছে কর্মসংস্থান, কমছে বেকারত্বের হার। গ্রাহকরা তাদের বিমার মেয়াদ পূরণ হলে টাকা যেমন তুলতে পারছেন, প্রিমিয়ামের টাকাও জমা দিচ্ছেন। অবসর নেওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এজেন্ট শাখা থেকে তুলছেন পেনশনের টাকা। শিক্ষকরা প্রতি মাসে তুলছেন বেতন। সুযোগ পেলেই স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এখানে এসে টাকা জমা করছে। কৃষক থেকে শুরু করে ছোট-বড় ব্যবসায়ীরাও এজেন্ট শাখায় হিসাব খুলছেন।


এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে শুধু ডিপোজিট গ্রহণ করাই নয়, ঋণ বিতরণ, মোবাইল টপ-আপ, বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, রেমিট্যান্সের অর্থ বিতরণ এবং যানবাহনের লাইসেন্স ও ফিটনেস ফি গ্রহণ ইত্যাদি সেবা দেওয়া হয়। এছাড়া এখানে এটিএম থেকে টাকা উত্তোলনে ডেবিট কার্ডের সুবিধাও নিতে পারেন গ্রাহক। রয়েছে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধাও। এসব সুবিধা দিতে প্রতিটি গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ব্যাংকের কোর ব্যাংকিং সিস্টেমে সংযুক্ত করা হয়। অর্থাত্ এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা এজেন্ট পয়েন্টের সেবার পাশাপাশি ব্যাংক শাখা ও এটিএমের সুবিধাও নিতে পারছেন।


কোম্পানি আইনের আওতায় অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান, আইটিভিত্তিক আর্থিক সেবা দিতে সক্ষম এ রকম প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানির প্রতিনিধি, ফার্মেসির মালিক, পেট্রোল পাম্প কিংবা গ্যাস স্টেশনের মালিক, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত অফিস, এমআরএর অধীনে অনুমোদন পাওয়া এনজিও, কোঅপারেটিভ সোসাইটির অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত কুরিয়ার, ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র এজেন্ট হতে পারে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট লেনদেনের ওপর আয় নির্ভর করে। যত বেশি লেনদেন হবে, তত বেশি কমিশন পাওয়া যাবে। যত বেশি হিসাব খুলতে পারবেন, তত বেশি কমিশন পাবেন। এছাড়া যত বেশি রেমিট্যান্স পেমেন্ট দিতে পারবেন, তত বেশি কমিশন পাবেন।




বর্তমানে এজেন্ট আউটলেটের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে শুধু হিসাব খোলা ও আমানত সংগ্রহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, ঋণ বিতরণের মাধ্যমে আয়উত্সারী কর্মকাণ্ডকে উত্সাহিত করে গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।


ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনো ব্যাংকিং সেবার বাইরে। দেশের সুষম ও টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনে ব্যাংকিংয়ের আওতা বহির্ভূত এই বিপুল জনগোষ্ঠী আর্থিক সেবার আওতায় এনে অর্থনৈতিক মূলধারার সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। তদপুরি অর্থনৈতিক উদীয়মান শক্তির দেশ হিসেবে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নত অর্থনীতির মহাসড়কে উঠার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবেও দেশের সক্ষম সব নাগরিকের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনা জরুরি। আর সে জন্য প্রয়োজন দেশের সক্ষম সব নাগরিকের ব্যাংক একাউন্ট থাকা।


বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এজেন্ট পয়েন্টগুলোতে এ যাবত্কাল জমা পড়েছে ১০ হাজার কোটির বেশি টাকা। রেমিটেন্স বিতরণ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর ঋণ বিতরণ হয়েছে এসব পয়েন্টের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৭২০ কোটি টাকা। দেশে গত সাত বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিটি আউটলেটে তিন জন করে কর্মী কাজ করছেন। ফলে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবায় প্রায় ৫০ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে।



জাতীয় এর আরও খবর: